মালদহে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
মন্দির ও মসজিদে প্রার্থনা সেরে দলীয় কর্মীদের নিয়ে মিছিল করে বরাবরের চেনা ভঙ্গিতেই মনোনয়ন জমা দিলেন ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর নিজস্ব কার্যালয় কালীতলা থেকে নেতা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে মিছিল করে সত্য চৌধুরী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী। দলের সংহতি তুলে ধরতে এদিন মন্ত্রীর মিছিলে পা মেলান তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, “এবার আমরা একক ভাবে পুরবোর্ড দখল করব। শুধু ইংরেজবাজার পুরসভা নয়, পুরাতন মালদহ পুরসভাও আমাদের দখলে থাকবে।”
কৃষ্ণেন্দুবাবুই রাজ্যের একমাত্র মন্ত্রী যিনি দল থেকে পুরভোটে লড়াইয়ের অনুমোদন পেয়েছেন। তাই তাঁর কাছে এবারে পুরসভা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর তিনি বলেন, “এ বারও আমরা পুরবোর্ড নিজেদের দখলে রাখব। প্রায় সব ক’টি আসনে জয়ী হয়ে আমরা পুরবোর্ড গড়ব।” এখানে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ কোন দল সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বিরোধীদের চোখে পড়ছে না।”
এ দিন সকালে শহরের দু’টি মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু। যান এলাকার জামে মসজিদেও। এরপরে এ দিন মন্ত্রী ছাড়াও সত্য চৌধুরী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তাঁর স্ত্রী তথা ৮ নম্বর ওর্য়াডের প্রার্থী কাকলী চৌধুরী, ৯ নম্বর ওর্য়াডের প্রতিভা সিংহ, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রসেনজিত্ দাস। কাকলি ও প্রতিভাদেবী বিদায়ী কাউন্সিলার হলেও প্রসেনজিত্ এবারই প্রথম পুরভোটে দাঁড়াচ্ছেন। মন্ত্রী নিজে দাঁড়িয়েছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডে। এদিন মন্ত্রীর সঙ্গে দলের প্রায় হাজার খানেক কর্মী মিছিলে সামিল হয়েছিলেন।
১৯৯০ সাল থেকে পুরনির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আসছেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। এ বার নিয়ে ছয় বারে পড়ল। গত পাঁচ বারের মধ্যে চার বারই জয়ী হয়েছিলেন তিনি। কেবলমাত্র একবারই হেরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এ বার জয়ের ব্যপারে যথেষ্ট আশাবাদী। এই নির্বাচনকে ঘিরে প্রথম থেকেই তত্পর তিনি। প্রায় রোজই সকাল থেকেই নিজের ওর্য়াডে ঘুরছেন মন্ত্রী। মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। নিজের ওর্য়াডের ঘোরার পাশাপাশি অন্য প্রার্থীদের হয়েও প্রচারে নেমে পড়েছেন তিনি। জেলায় বিজেপি-র ক্ষমতা বাড়ছে। এ ছাড়া এই জেলায় কংগ্রেসও শক্তিশালী। সেই সঙ্গে এই পুরসভার বামফ্রন্টের একাধিক কাউন্সিলার ছিলেন। ফলে এবার চতুর্মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “শহর তথা জেলার সার্বিক উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য। তাই আমি আশাবাদী, মানুষ এবারও আমার পাশে থাকবেন।”
ইংরেজবাজারের পাশিপাশি পুরাতন মালদহের বিদায়ী চেয়ারম্যান বিভূতিভূষণ ঘোষ, বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান স্বাধীন ঘোষ সহ ওই পুরসভার ২০টি ওর্য়াডের প্রার্থীরা এদিন মনোনয়ন পত্র জমা দেন।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময় দুই দিন থাকলেও এখনও মালদহ জেলায় সব আসনে প্রার্থী দিতে পারল না কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। দল সূত্রের খবর, বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। সোমবার দুপুরে ইংরেজবাজারের নিজস্ব কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ইংরেজবাজার পুরসভার ২৯টি আসনের মধ্যে ১৭ টি আসন এবং পুরাতন মালদহের ২০ টি আসনের মধ্যে ১৭টি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসম নূর। পরে এদিন রাতে ইংরেজবাজার পুরসভা ফের নয়টি প্রার্থীর নাম ঘোষমা করা হয়। তবে এখনও দুই পুরসভা মিলে মোট ছয়টি আসনের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি কংগ্রেস। ইংরেজবাজার পুরসভার ৮,১০ ও ১৫ নম্বর ওর্য়াডের প্রার্থী কংগ্রেস খুঁজে পাচ্ছে না বলে দলের একাংশ নেতারা জানিয়েছেন। মৌসম বলেন, “অধিকাংশ ওর্য়াডেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। বাকি ওর্য়াডে প্রার্থীর নাম আজ, মঙ্গলবার ঘোষনা করা হবে। আমাদের প্রচুর প্রার্থী রয়েছেতাই প্রার্থী না পাওয়ার বিষয়টি ঠিক নয়।”
এদিকে,গত ১৯ তারিখে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল বামফ্রন্ট। এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবন মৈত্র দুই পুরসভার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে সিপিআই এর সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় এদিন তিনটি ওর্য়াডের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে পারেনি তিনি।