—ফাইল চিত্র।
গত সপ্তাহেরই ঘটনা। চা শ্রমিকদের ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে পাহাড়ে বন্ধ ডেকে বসে চা বাগিচার শ্রমিক সংগঠন। পাহাড়ের মূল রাজনৈতিক দলগুলিও তাকে সমর্থনের জন্য এগিয়ে আসে। দার্জিলিঙের পরিবহণ থেকে হোটেল-সহ বিভিন্ন সংগঠনকে তা সমথর্নের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। তার পরে যা ঘটেছে তা এ যাবৎকালে দার্জিলিং পাহাড় দেখেনি। গত দুই বছর আগের ১০৫ দিনের পাহাড় বন্ধের সময় স্বতস্ফূর্ত ভাবে যে সব পরিবহণ সংগঠন এগিয়ে এসেছিল, তাদের একাংশই ধর্মঘট-বন্ধের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বসেন। ক্ষমতাসীনদের দলের নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এ ভাবে পাহাড় বন্ধ করে আন্দোলন কেন! ভরা পর্যটন মরসুমে বন্ধ না করে অন্যভাবে প্রতিবাদ করাটা প্রয়োজন।
যদিও গত শুক্রবার পাহাড়ে বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু পর্যটনের সঙ্গে জড়িতেরা সকলেই জানিয়েছিলেন, চা বাগান কেন যে কোনও বিষয়ে আন্দোলনের ক্ষেত্রে বন্ধকে এড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে দার্জিলিঙের মতো এলাকার ভাবমূর্তির স্বার্থের তা দরকার।
তা হলে কি পর্যটনের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বদলেছে পাহাড়, এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে দার্জিলিং ম্যাল চৌরাস্তা থেকে কালিম্পঙের ডম্বরচক অবধি। ইতিমধ্যে মোর্চার বিনয় তামাং চা শ্রমিকদের জন্য অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। মোটর স্ট্যান্ডে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে তিনি অনশন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। সোমবারই তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আরও বড় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপাও।
পাহাড়ের রাজনৈতির নেতৃত্ব বলছেন, ‘‘শুধু বিনয়পন্থী বা বিমলপন্থীরা নয়, জিএনএলএফ ছাড়াও তৃণমূল বা সিপিআরএমের মত দলগুলি চা বাগানে আন্দোলনে একমঞ্চে এসেছে। সেই আন্দোলন চলাকালীন পাহাড় পর্যটকেরা ঠাসা। পর্যটনকে বাইরে রেখেই আপাতত চলছে আন্দোলন। শৈলশহরে এমন আগে সাধারণত দেখা যায়নি’’
দার্জিলিঙের প্রবীণ বাসিন্দাদের কয়েক জন জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের শেষ অবধি পাহাড়ে যে কোনও বিষয়ে আন্দোলন মানেই পর্যটকদের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াত। অনশন বা ধর্না থেকে হুটহাট রাস্তা বন্ধ, গাড়ি বন্ধ বা বন্ধ ডাকা হয়েছে। আবার কয়েক ঘণ্টার নোটিসে পাহাড় ছাড়া বা ‘ঘর ভিতরো জনতা’ মতো ঘরে বসে থাকার ফতোয়াও দেওয়া হয়েছে। তাই পাহাড়ের যে কোনও আন্দোলন কর্মসূচি, হুমকি-হুঁশিয়ারি হলেই রোহিণীর পথে কার্যত পা বাড়াতে ভয় পেতেন পর্যটকেরা। সেই পরিস্থিতির কিছুটা বদল এসেছে বলেই মনে হচ্ছে পাহাড়ে।
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘দার্জিলিঙের পর্যটনের ভাবমূর্তি আর দশটা জায়গার মতো নয়, আমাদের সকলকে তা মনে রাখতে হবে। বন্ধ, ধর্মঘটের রাজনীতি থেকে বার হয়ে আসতে হবে। চা বাগিচার সমস্যা সরকার আন্তরিক ভাবে মেটাতে তৎপর। এখন পাহাড়ে অনেকেই অন্যরকম করে ভাবা শুরু করেছেন।’’ তিনি জানান, চা বাগিচা থেকে পরিবহণ বা অন্য কোনও সমস্যা হতেই পারে, তার দাবি বা আন্দোলন একরকম থাকতে পারে। আর পর্যটন থাকবে পুরোপুরি আলাদা।
ধমর্ঘটের আওতা থেকে পাহাড়ের পর্যটনকে বাদ রাখার দাবি সমতলে গত ১০ বছর আগেই উঠেছিল। পাহাড়ের ক্ষেত্রে দলগুলিকে এড়ানো সংগঠনগুলি পক্ষে সম্ভবত হত না। কিন্তু বদল যে প্রয়োজন হয়ে পড়়েছে তা মনে করছেন পাহাড়ের পরিবহণ এবং পর্যটনের দুটি মূল সংগঠনের কর্তা প্রদীপ লামা থেকে শুরু করে পর্যটন সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালও। তাঁরা বলছেন, ‘‘এই বোনাস আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু তাতে পাহাড়ের পর্যটনের যাতে ক্ষতি না হয় তা সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’’