ছবি: প্রতীকী ও সংগৃহীত
সেনা বাহিনীতে পরীক্ষা দেওয়ার নাম করে দলবেঁধে ঘর ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিলিগুড়ি শহরের খানিকটা বাইরে বাগডোগরা এলাকায় নেওয়া সেই ভাড়াবাড়িতে বসে তৈরি হয়েছিল কোটি টাকার সোনা লুটের গোটা পরিকল্পনা। পুলিশ সূত্রের খবর, ২৪ অগস্ট বর্ধমান রোডের ওই সংস্থায় আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লুটের অন্তত সাতদিন আগে দুষ্কৃতীরা বিহার থেকে শিলিগুড়ি আসে। সেনা বাহিনীতে পরীক্ষার জন্য পরপর দৌড়, নানা কসরৎ, লেখা পরীক্ষা দিতে আসা হয়েছে বলে বাগডোগরায় দলবেঁধে ঘর ভাড়া নেয়। পুলিশের দাবি, হানা দেওয়ার আগের সাতদিন দুষ্কৃতীরা ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে রোজ বর্ধমান রোডের ওই এলাকায় এসেছিল।
ঘটনার পরে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। অন্তত পাঁচজনকে লুটের সময় বাণিজ্যিক ভবনটিতে থাকতে দেখা যায়। দু’টি বাইকও ছিল দুষ্কৃতীদের সঙ্গে। সেই ছবি শিলিগুড়ি কমিশনারেটের প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি, শাখা ছাড়াও জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর এবং কোচবিহার জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানার অফিসারদের পাঠানো হয়। সেখান থেকেই সূত্র মারফৎ পুলিশের কাছে বাগডোগরার ঘাঁটির খবর আসে। সেখানকার দু’জনকে ছবিগুলি দেখানোর পর তারা সেনা বাহিনীতে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসে যুবকদের সঙ্গে অভিযুক্তদের মিল রয়েছে বলে জানিয়ে দেন। আবার ঘটনার পর থেকে বাগডোগরার ওই পাঁচ-সাতজন যুবকের আর কোনও হদিশ না মেলায় পুলিশ বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে।
শিলিগুড়ি কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘দলটি বিহার কিংবা ঝাড়খন্ডের তা প্রায় নিশ্চিত। তবে স্থানীয় কোনও দল বা কেউ ছিল কি না তা দেখা হচ্ছে। সেনা বাহিনীর চাকরি দিতে এসেছি বলে ঘর ভাড়া নিয়ে ঘাঁটি গেড়ে লুটের ঘটনাটি ঘটেছে।’’ তিনি জানান, ঘটনার পর পুলিশের একটি বিশেষ দল তৈরি হয়েছে। সিআইডির মাধ্যমে তিনজনের মুখের ছবি আঁকাও হয়েছে। সেগুলো নিয়ে বিহার এবং বিহার লাগোয়া রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তল্লাশি চলছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দুটি বাইকের উপস্থিতি মেলে। সেগুলোতে করে বড় ব্যাগে লুটের সোনা নিয়ে মাটিগাড়ার দিক থেকে এশিয়ান হাইওয়ে ধরে দুষ্কৃতীরা পালিয়েছে। তদন্তে বাইক দুটির নম্বর নিয়ে ঘাঁটঘাঁটি করতেই তদন্তকারীরা বোঝেন নম্বর প্লেট দু’টি ভুয়ো। পুলিশের অনুমান বিহার থেকে দু’টি বাইক আনা হয়েছিল। লুটের আগে তাতে শিলিগুড়ির দু’টি নম্বরের ভুয়ো ‘ডিজিটাল ফন্টের’ নম্বর প্লেট লাগানো হয়েছিল।
তদন্তকারীরা জানান, এই ধরনের নম্বর প্লেট শিলিগুড়িতে সাধারণত তৈরি হয় না। শিলিগুড়ি হাতে লেখা বা অফসেট প্রিন্ট করা স্টিকার জাতীয় নম্বর প্লেটের চল রয়েছে। বাইক দু’টি বেশ পুরনো হলেও নম্বর প্লেট একেবারেই নতুন ছিল। যা দেখেই অফিসারদের খটকা লাগে। পুলিশের অনুমান লুটের পর খড়িবাড়ি-গলগলিয়া হয়ে দুষ্কৃতীরা বিহারে যেতে পারে। বিধাননগর সোনাপুর, চোপড়া হয়েও বিহারের দিকে পালাতে পারে। তবে এশিয়ান হাইওয়েতে সর্বত্র সিসিটিভি না থাকায় এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।