টি-শার্ট উড়িয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে ট্রেনকে রক্ষা করা বালক (বাঁ দিকে)। থেমে যাওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র। —ফাইল চিত্র।
রাতারাতি বদলে গিয়েছে গাঁয়ের চেহারা। কড়িয়ালি শেষ কবে এত নতুন মুখের ভিড় দেখেছে, মনেই করতে পারলেন না গ্রামবাসীরা। জেলার নেতারা তো বটেই, এসেছেন রাজ্যের মন্ত্রী, রেলের বড় বড় কর্তারাও! যাঁরাই আসছেন, সকলেরই এক প্রশ্ন— মুরসালিমের বাড়ি কোনটা?
এ সব একেবারেই যে আচমকা, তা ঠিক নয়। শুক্রবার রাত থেকেই তা বেশ ঠাহর করতে পারছিলেন স্থানীয়েরা। কারণ, তত ক্ষণে মুরসালিমের সাহসিকতার গল্প ওই ছোট্ট জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে। গাঁয়ে তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে বছর বারোর ওই খুদেকে ঘিরে উন্মাদনা। সকালে গাঁয়ে এত লোক দেখে এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘যে সব নেতারা এতকাল গাঁয়ের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতেন না, কড়িয়ালি বাঁচল কী মরল— এতে যাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না, তাঁরাও এসেছেন!’’
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মুরসালিমের উপস্থিত বুদ্ধিতেই শুক্রবার বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে আপ শিয়ালদহ-শিলচরগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। রেললাইনে গভীর গর্ত দেখে গায়ের লাল টি-শার্ট খুলে মাথায় ঘোরাতে ঘোরাতে ছুটে এসেছিল ওই বালক। বিপদ বুঝে চালকও ট্রেনটি থামিয়ে দেন। ছুটে আসেন রেলের লোকেরা। দেখেন, সত্যিই আপ লাইনের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে! প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লাইন মেরামতির কাজ শুরু হয়। পরে সুষ্ঠু ভাবেই গন্তব্যে পৌঁছয় ট্রেনটি। এই ঘটনার পর থেকেই খবরের শিরোনামে উঠে আসে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার প্রত্যন্ত গ্রাম কড়িয়ালি।
শনিবারই মুরসালিমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের মন্ত্রী তাজমুল হোসেন। সংখ্যালঘু দফতরের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল জানান, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই মুরসালিমের বাড়িতে এসেছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘‘এমন সাহসি ছেলের জন্য গর্ব হয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওই বালককে পুরস্কৃত করা হবে।’’ রেলেরও মুরসালিমের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মত তাজমুলের।
কড়িয়ালির এক কোনায় মাটির ঘরে থাকে মুরসালিমের পরিবার। খুদের বাবা মহম্মদ ইসমাইল পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। মা বাড়িতেই থাকেন। শুধু নেতারাই নন, মুরসালিমের বাড়িতে গিয়েছেন কাটিহারের ডিআরএম সুরেন্দর কুমারও। মুরসালিম ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেন, ‘‘মুরসালিমের ব্যাপারে খোঁজখবর করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওকে যাতে সাহসিকতার সম্মান দেওয়া যায়, তার জন্য রিপোর্ট পাঠানো হবে।’’