১২ বছর পর ভাইয়ের হাত ধরে সোমবার বাড়ি ফিরলেন কোচবিহারের মকবুল হোসেন, চেন্নাইয়ে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আবাসিক হোম থেকে। মকবুলের বাড়ি কোচবিহারের মোয়ামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোটা আথারোকোঠায়।
পরিবার সূত্রে খবর, ছোটবেলা থেকেই তাঁর মানসিক অসুস্থতা ছিল. কিন্তু ছেলেকে চিকিৎসক দেখানোর কথা কোনও দিনই ভাবেনি সাধারণ কৃষক পরিবার। ফলে মানসিক অসুস্থতা বাড়তে থাকে। ৩০ বছর বয়সে হঠাৎ বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান মকবুল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনও সন্ধান মেলেনি। এক সময়ে তাঁকে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিল পরিবার। পরিস্থিতি আচমকা বদলে গেল চেন্নাই থেকে আসা ফোনে।
মকবুলের ভাই সহিদুল কাজের সূত্রে কেরলে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগে বাড়ি থেকে ফোন করে আমাকে জানানো হয়, দাদার খোঁজ মিলেছে। গ্রামেরই এক মাদ্রাসা শিক্ষকের কাছে চেন্নাইয়ের একটি হোম থেকে ফোন আসে। হোমের তরফে মকবুল নামে ওই গ্রামে কেউ ছিলেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। প্রাথমিক কথাবার্তার পর হোমের অধিকর্তা এস বিদ্যাকর জানান, মকবুল গত এক বছরের বেশি তাঁদের কাছে রয়েছে। পরিবারের কেউ যেন পরিচয়পত্র নিয়ে গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসেন। আমি কেরলে থাকি। ফলে আমিই যাই দাদাকে আনতে।’’
এস বিদ্যাকর ফোনে বলেন, ‘‘আমরা মূলত ভবঘুরে এবং রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষদের নিয়ে কাজ করি। গত বছর জানুয়ারিতে মকবুলকে আমরা রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখি। গায়ে ছিল ময়লা কম্বল। সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যাগে তার, স্টিলের রড, নোংরা জামা-কাপড়। আমরা তাঁকে নিয়ে আসি, মনোচিকিৎসক দেখানো হয়। প্রথমে উনি নাম-পরিচয়, ঠিকানা কিছুই বলতে পারেননি। বেশ কয়েক মাস চিকিৎসার পর উনি গ্রামের বাড়ির কথা, পরিবারের কথা বলতে শুরু করেন।’’
এর পর চেন্নাইয়ের ওই সংস্থা ইন্টারনেটে ওই গ্রামের মাদ্রাসার খোঁজ করে। সেই সূত্রে পাওয়া নম্বরে ফোন করে মাদ্রাসার শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন সংস্থার সদস্যেরা। শনিবার কেরল থেকে সহিদুল গিয়ে দাদাকে চিহ্নিত করেন, মকবুলও চিনতে পারেন ভাইকে। এর পর ওই সংস্থার সাহায্যেই বাড়ি ফেরেন মকবুল, ভাইয়ের হাত ধরে।