সরেজমিনে: ময়নাগুড়ির একটি বাড়িতে ঢুকছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।
শীতলখুচির জোড়পাটকি গ্রামে না গিয়েই কোচবিহার ছাড়লেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা। রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ কমিশনের ছয় সদস্যের দল দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে আলিপুরদুয়ার ও ময়নাগুড়িতে গিয়েছেন। জোরপাটকিতে গুলিকাণ্ডে নিহতদের একাধিক আত্মীয় এ দিন জানান, কমিশনের সদস্যরা যে বিজেপির লোক তা প্রমাণ করে গেলেন। বিজেপি অবশ্য তা মানতে নারাজ। বিজেপির দাবি, কেবল ভোট পরবর্তী হিংসা খতিয়ে দেখতেই কমিশনের সদস্যরা জেলায় এসেছিলেন। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, ‘‘মানধিকার কমিশনের সদস্যদের রাজ্যের পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। যেখানে আমাদের কর্মীরা বেশি আক্রান্ত সেখানে তাঁরা যাননি।’’
রবিবার, আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাটের শিশুবাড়ি ও ফালাকাটার ছোট শালকুমারের আটমাইল এলাকায় যান কমিশনের সদস্যরা। তৃণমূলের অভিযোগ, দু’জায়গাতেই কমিশনের সদস্যরা বেছে বেছে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতেই গিয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামীর অভিযোগ, ‘‘আসলে বিজেপির হয়ে কাজ করতেই জেলায় এসেছে কমিশন। ভোট পরবর্তী হিংসায় খুন হওয়া দীপক রায়-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হতে আক্রান্ত তৃণমূল কর্মী বা সাধারণ মানুষের বাড়িতে যাননি কমিশনের সদস্যরা।’’ ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মণের দাবি, ‘‘ভোটের পর জেলায় বিজেপি কর্মীরাই আক্রান্ত হয়েছেন। তৃণমূলের কেউ আক্রান্ত হননি।’’
এ দিন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সূত্রের খবর, ময়নাগুড়ির দক্ষিণ খাগড়াবাড়ি, ব্রহ্মপুর, দোমোহনি, সাপটিবাড়ি এবং চূড়াভাণ্ডার এলাকায় তাঁরা যান। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ময়নাগুড়িতে পৌঁছন তাঁরা। প্রায় দশটি বাড়িতে গিয়ে তাঁরা কথা বলেন। বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাঁরা ময়নাগুড়ি থেকে বের হয়ে যান। ময়নাগুড়ির বিজেপি নেতা অনুপ পাল বলেন, ‘‘আমাদের দলের যে নেতা, কর্মীরা তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়ে মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেছেন কমিশনের সদস্যরা।’’
গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে মানবাধিকার কমিশনের ছয় সদস্যের দল কোচবিহারে পৌঁছন। তিনদিনে কোচবিহার জেলার দিনহাটায় জামাদরবসে, তুফানগঞ্জ ও শীতলখুচির বিভিন্ন বাসিন্দার বাড়িতে যান ওই দলের সদস্যরা। যাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই বিজেপি দলের সদস্য বা কর্মী। একমাত্র তুফানগঞ্জের চিলাখানায় মৃত তৃণমূল কর্মী সাহানুর রহমানের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই দলের সদস্যরা। শুক্রবার, শীতলখুচিতে কমিশনের সদস্যরা একাধিক মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যান। তার মধ্যে রয়েছে আনন্দ বর্মনের বাড়িও। পাঠানটুলির আনন্দকে ১০ এপ্রিল কোচবিহারে ভোটের দিন গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে ওই বাড়িতে গিয়ে অবশ্য কাউকেই পাননি কমিশনের সদস্যরা। বাড়ি তালাবন্ধ দেখে ঘুরে যান তাঁরা। প্রশ্ন উঠেছে, কমিশনের সদস্যদের যাতায়াতের পথেই জোরপাটকি গ্রাম। তা হলে কেন, ওই গ্রামে গেলেন না কমিশনের সদস্যরা সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘আসলে আগে থেকেই সব ঠিক করে বলে দেওয়া হয়েছিল। ওই জন্য কেবল বিজেপির নেতা, কর্মীদের বাড়িতে ঘুরেছেন তাঁরা।’’