৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাম ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার’ তালিকায় তোলার কাজ শুরু করছে প্রশাসন। সোমবার কোচবিহার জেলাশাসকের দফতরে ওই ব্যাপারে প্রশাসনিক বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলা ও ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় জনগণনা দফতরের পদস্থ কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, ভারত-ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ১৪,৮৫৪ জন বাসিন্দার নাম ইতিমধ্যেই তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আগামী দশ দিনের মধ্যে প্রতিটি মৌজা ভিত্তিক এলাকা নির্দিষ্ট করে ওই বাসিন্দাদের নাম ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারে তোলা হবে। এ জন্য সুপারভাইজার-সহ বিভিন্ন পদাধিকারীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উলগানাথন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারে নাম তোলার পরেই বাসিন্দাদের আধার কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংযোজিত ছিটমহল এলাকাগুলিকে ডাক পরিষেবার আওতার আনার রূপরেখাও তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই কোন ছিটমহল এলাকা লাগোয়া কোন ডাকঘরের আওতায় যাবে তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। চূড়ান্ত করা হয়েছে প্রতিটি ছিটমহলের নির্দিষ্ট পিনকোড নম্বর। জেলাশাসক বলেন, “ঠিকানা উল্লেখের মতো পরিস্থিতির তৈরির কথা মাথায় রেখেই ওই কাজ করা হয়েছে। প্রয়োজনে নতুন ডাকঘর তৈরির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলব।” এ দিকে ছিটমহলের বাসিন্দাদের একাংশের ভুয়ো ঠিকানা ও পরিচয় উল্লেখ করে সচিত্র ভোটারপত্র তৈরির অভিযোগ নিয়েও কড়া পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। জেলাশাসক জানান, যাঁরা নতুন নাগরিকত্ব পাচ্ছেন তাঁদের সবকিছুই নতুন করে তৈরি করতে হবে। কোনও ভুয়ো নথি থাকলে সে সব বাতিল করা হবে।
এ দিকে এ দিন কোচবিহার সদর মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে হাজির হয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ছিটমহল নিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাম, কংগ্রেস বরাবর ছিটমহল বিনিময় নিয়ে বিরোধিতা করেছে। তাদের বাধাতেই এতদিন পরে ওই সমস্যার সমাধান হল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগে এবং পরে ছিটমহল সমস্যা সমাধানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিকে নানা ভাবে ওই কাজে বাধা দিয়েছেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ওই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য হন ছিটমহল বিনিময়ে সায় দিতে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘ছিটমহল বিনিময়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা বরাদ্দ করেছে তা নয়ছয় হচ্ছে। এক খাতের টাকা আরেক খাতে খরচ হচ্ছে। তিনি বলেন, “পুনর্বাসন ও উন্নয়নে যা টাকা প্রয়োজন হবে তা কেন্দ্রীয় সরকার দেবে। কিন্তু ওই টাকার সঠিক ব্যাবহার হচ্ছে না। নয়ছয় হচ্ছে। তা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানাব।” কোচবিহারের জেলাসাশক পি উলগানাথন ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন।