পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ও মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের।—ফাইল চিত্র।
ফুলবাড়ির বাসিন্দা এক কলেজছাত্রীর দেহ উদ্ধার ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হল সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে। শুক্রবার ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়। সেদিনই খুনের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ দিনই ফুলবাড়িতে ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান অশোক ভট্টাচার্য। ফুলবাড়ি-ডাবগ্রাম এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন মেয়র। এই অভিযোগে শনিবারই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠিও লিখেছেন বলে জানান তিনি। রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক।
প্রায় একমাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন ওই ছাত্রী। শুক্রবার ফুলবাড়ির চম্পদগছের একটি পুকুর থেকে ওই ছাত্রীর বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয়। দেহে পচন ধরেছিল বলে অভিযোগ। এরপরেই খুনের অভিযোগ দায়ের করে ছাত্রীর পরিবার। শুক্রবার রাতে মহম্মদ ফারুক নামে একজনকে আটক করেছে এনজেপি থানা। ওই ব্যক্তি বিবাহিত, তার বাড়ি বাগডোগরায়।
ওই ব্যক্তির সঙ্গে ছাত্রীর সম্পর্ক রয়েছে বলে এর আগেও অভিযোগ করেছিল ছাত্রী পরিবার। তখনই বাড়ির লোক অভিযোগ করেছিল, মহম্মদ ফারুক ওই ছাত্রীকে হুমকি দিচ্ছিল। এ দিন অশোক বলেন, ‘‘মেয়েটির মায়ের দাবি, দোষীদের কড়া সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। মেয়েটি একমাস ধরে নিখোঁজ ছিল। তা পুলিশকে জানানোর পরেও পুলিশ পদক্ষেপ করেনি। তাই পুলিশেরও সাজার দাবি তুলেছি।’’ কিছুদিন আগেই মাটিগাড়ায় এক নাবালিকাকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। তার আগে চম্পাসারিতে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। শহরের একটি জিম ও জিমের সামগ্রী বিক্রি কেন্দ্রে কর্মরত এক মহিলা সঙ্গীতা কুণ্ডু তিন বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর খোঁজ আজও মেলেনি। এ দিন এই প্রসঙ্গও তোলেন মেয়র। তাঁর দাবি, তৃণমূলের মদতে ফুলবাড়ি-ডাবগ্রাম এলাকা বালি মাফিয়া, জমি মাফিয়া ছাড়াও সীমান্তে ব্যবসায় সিন্ডিকেট রাজ মিলিয়ে অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে গিয়েছে। অশোকের কথায়, ‘‘এই দায় যেমন এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী এড়াতে পারেন না। রাজ্য সরকারও পারে না।’’ এলাকার বিধায়ক গৌতম দেব এসব নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিশ ও এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে মৃত ছাত্রীর পরিবার। মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে পুলিশের কাছে সন্দেহভাজনের নাম দেওয়ার পরেও খোঁজ করা হয়নি বলে অভিযোগ বাড়ির লোকের। মেয়েটির ভাইয়ের দাবি, সময়ে খোঁজখবর শুরু করলে হয়তো বেঁচে ফিরতেন তাঁর দিদি। মৃতার ভাই বলেন, ‘‘আমি পুলিশের কাছে বার বার গিয়েছি। নানা বাহানা বানিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে খোঁজা হচ্ছে বলে। দিদি নিখোঁজ হওয়ার পরে এবং দিদির দেহ উদ্ধারের পরেও এলাকার তৃণমূল প্রধানকে ফোন করেছিলাম। কেউ সমবেদনা জানাতে আসেনি আমাদের।’’
যদিও পুলিশকর্তাদের দাবি, নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশ সব সন্দেহভাজনদের ডেকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছিল। তদন্তের প্রক্রিয়া চালু ছিল। এ দিন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য ওই ছাত্রীর বাড়ি যাচ্ছেন শুনেই তড়িঘড়ি স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও মেয়েটির বাড়ি যায় বলে অভিযোগ। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা চেঁচামেচি করেন। গৌতম দেব বলেন, ‘‘রবিবার মেয়েটির বাড়ি যাব।’’