মালদহের বাজার দখল করে রয়েছে নদিয়ার আম। নিজস্ব চিত্র।
বৈশাখ শেষ হয়ে জ্যৈষ্ঠ আসতে চলল, মালদহের আমের এখনও বাজারে সে ভাবে দেখা নেই। বরং মালদহের বাজার দখল করে রয়েছে নদিয়ার আম। কেন এই দেরি, সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দফতরের বক্তব্য, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য এ বারে মালদহে আমের ফলন স্বাভাবিকের থেকে প্রায় অর্ধেক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। সেই একই কারণে আমের দাম বাড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। ওই দফতরের দাবি, জেলার আম বাজারে আসতে শুরু করবে চলতি মাসের শেষে বা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে।
জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় ৩১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে এ বারে। এই জেলায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ, ফজলি, আম্রপালি, গোপালভোগ-সহ প্রায় আশিটিরও বেশি প্রজাতির আম চাষ হয়। জেলায় আমের ফলন গড়ে সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন। তবে এ বারে শীত দীর্ঘদিন স্থায়ী ছিল। কার্যত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ঠান্ডা ছিল। এর মধ্যে ডিসেম্বরে দফায় দফায় বৃষ্টিও হয়েছে। ফলে এ বার মালদহে আম গাছে দেরিতে মুকুল এসেছে। স্বাভাবিকভাবে ফলনও হতে দেরি হবে।
সংশ্লিষ্টমহলের বক্তব্য, ডিসেম্বরে বৃষ্টির জেরে মুকুলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। আবার গত মাসে টানা দু’সপ্তাহ তাপপ্রবাহে বেশ কিছু আম ঝরে পড়েছে। পাশাপাশি ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতেও বেশ কিছু আমের ক্ষতি হয়েছে। বছরে সাধারণ তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ মেট্রিক টন ফলন হয় মালদহে। এ বারে তা দেড় থেকে দু’লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি হবে না বলেই মনে করছে জেলা উদ্যানপালন দফতর।
ফি বছর মে-র শেষে মালদহের বাজারে চলে আসে গোপালভোগ আম। এই আম দিয়ে মূলত আমসত্ত্ব তৈরি হয়ে থাকে। এ বারে ফলন কম হওয়ায় গোপালভোগের দাম চড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার ফলে আমসত্ত্বের দামও এক লাফে অনেকটা বেড়ে যেতে পারে।
উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, গোপালভোগ আম মে মাসের শেষে এবং জুন মাসের শুরুতে বাজারে চলে আসবে। জুনের মাঝামাঝি থেকে বাজারে আসতে শুরু করবে হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ থেকে শুরু করে অন্যান্য বেশ কিছু দেশীয় প্রজাতির গুটি আম। কিন্তু সেই সমস্ত আমের ফলন এ বার মার খাওয়ায় বাজারে দাম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক সামন্ত লায়েক বলেন, ‘‘আবহাওয়ার তারতম্য এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ বারে জেলায় আমের ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলন কম হওয়ার জেরে বাজারে আম কম আসবে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে দাম কিছুটা চড়তে পারে।’’