রাজ্য সড়কে আম ফেলে অবরোধ ব্যবসায়ীদের। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
অধিক ফলনই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠল মালদহ জেলার আম চাষিদের। তাঁদের বাগান থেকে জলের দরে বিক্রি করতে হচ্ছে আম বলে অভিযোগ। সরকারি মুল্যে আম কেনার দাবিতে রবিবার সকাল নটা থেকে ইংরেজবাজারের অমৃতিতে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন সারা ভারত কৃষকসভার নেতৃত্ব। তাঁরা মালদহ-মানিকচক রাজ্য সড়কের উপরে আম ফেলেও বিক্ষোভ দেখান। ৩০ মিনিট ধরে বিক্ষোভ দেখানোর পর তাঁরা নিজেরাই অবরোধ তুলে নেন। এর ফলে কিছু ক্ষণের জন্য রাজ্য সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বিপাকে পড়তে হয় নিত্য যাত্রীদের।
কৃষকসভার ইংরেজবাজার ব্লক সভাপতি দুলাল মণ্ডল বলেন, ‘‘বাজারে আমের দাম নেই। ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে চাষিদের। অথচ প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আমচাষিদেরও অবস্থা আলু চাষিদের মতোই হবে। আমরা চাই সরকার ন্যায্য মুল্যে আম ক্রয় করুক।’’ একই দাবি তুলেছেন জেলার আম ব্যবসায়ী এবং চাষিরা। মালদহ আম ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘এ বার জেলাতে বিপুল পরিমাণে আম উৎপাদন হয়েছে। ব্যাপক পরিমাণে আম উৎপাদন হলেও চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। কারণ বাংলাদেশে বিগত বছর ধরে আম যাচ্ছে না। আর বাজারে তেমন দামও নেই। আমরা চাই চাষিদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি পদক্ষেপ করা হোক। চাষিদের কাছ থেকে সরকার আম ক্রয় করে বাজারের বিক্রি করুক।’’
সরকারি মুল্যে আম কেনা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘বাজার থেকে চাষিদের কাছ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে আম কেনা হবে। সেই আম আমরা কলকাতা, দিল্লি, শিলিগুড়ি প্রভৃতি বাজারে বিক্রি করব। এর ফলে চাষিদেরও সুবিধে হবে।’ যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা পাননি বলে জানিয়েছেন জেলা শাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী। তিনি বলেন, ‘‘এমন কোনও নির্দেশিকা আমার কাছে আসেনি। আসলে আমরা তা পালন করব।’’
জেলার উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে। ঝড় বৃষ্টিতে কিছু পরিমাণ আমের ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল। তবে চাষিদের তেমন লোকসান হয়নি। জেলায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্মণভোগ আম চাষ হয়েছে। এ ছাড়া হিমসাগর পাঁচ এবং ল্যাংড়া সাত হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছে। আম ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মরসুমে বাগান থেকে ২৫০ টাকা প্রতি কুইন্ট্যাল লক্ষ্মণভোগ আম বিক্রি করতে হচ্ছে। হিমসাগর শেষের দিকে থাকায় মন প্রতি ৫০০ টাকা এবং ল্যাংড়া ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা বাজারে লক্ষ্মণভোগ বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার টাকা, ল্যাংড়া ৭-৮ টাকা কেজি দরে। হিমসাগরের বাজার শেষের দিকে থাকায় ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এমন দরে আম বিক্রি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে চাষিরা। এ দিনের বিক্ষোভে আমচাষিরাও সামিল হয়েছিলেন। অমৃতির আমচাষি নিখিল কীর্তনিয়া এবং পুরাতন মালদহের সাহাপুরে চন্দন বসু বলেন, ‘‘শুরু থেকেই আমের বাজার মন্দা যাচ্ছে। এই ক’টা মাস ব্যবসা করে আমাদের সারা বছর সংসার চলে। বাজারের আমের দাম নেই বললেই চলে। এ ছাড়া আম গাছ থেকে ভাঙার জন্য এক এক জন শ্রমিককে ৩০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়। প্যাকিং-এর জন্য আবার ২৫০ টাকা করে দিতে হয়। শুধু তাই নয়, রাতের বেলা বাগান পাহারা দেওয়ার জন্য ৩০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়। বিগত বছর আম তেমন উৎপাদন হয়নি বলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। এ বার বেশি উৎপাদন হওয়ায় দাম মিলল না। সরকার সাহায্য করলে কিছুটা হলেও ঘাটতি মিটবে আমাদের।’’