শব্দ বাড়িয়ে টিভি দেখা নিয়ে স্ত্রীকে মারধর করছেন এক ব্যক্তি৷ যা দেখে তাঁদের তেরো বছরের মেয়ে ছুটে গিয়েছিল থানায়৷ কিশোরীর কাছে সব শুনে পুলিশও ওই ব্যক্তিকে থানায় ধরে নিয়ে যায়৷ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে স্ত্রী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। একদিন পরে তাঁকে থানা থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়৷ কিন্তু তারই দুদিন পর ওই ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল রাজগঞ্জের সাহাপাড়ায়৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম মোতিলাল রায় (৪৫)৷ পেশায় গাড়িচালক ওই ব্যক্তি স্ত্রী ও তেরো বছরের মেয়েকে নিয়ে রাজগঞ্জের সাহাপাড়ায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন৷ মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী৷
পুলিশ ও মৃত ব্যক্তির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার দুপুরের দিকে বাড়িতে শব্দ বাড়িয়ে টিভি দেখছিলেন মোতিলালবাবু৷ তখন টিভির শব্দ কমাতে বলেন তাঁর স্ত্রী৷ এতে করে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়৷ সেই সময় মোতিলালবাবু তার স্ত্রীকে মারধরের পাশাপাশি রেগে গিয়ে টিভিও ভেঙে ফেলেন বলে অভিযোগ৷
যা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে থানায় ছুটে যায় তেরো বছরের মেয়েটি৷ তার কাছে সব শুনে পুলিশ বাড়িতে যায় এবং মোতিলালবাবুকে থানায় ধরে নিয়ে যায়৷ কিন্তু শনিবার তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷
মোতিলালবাবুর দাদা শান্তি রায়ের অভিযোগ, ‘‘ওই একদিন আমার ভাইকে থানার লকআপেই রেখে দেওয়া হয়েছিল৷ পরদিন ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে বাহাদুর এলাকায় তাদের বাড়িতে নিয়ে যান৷ সেখানে একদিন থেকে রবিবার ফিরে আসে৷ কিন্তু এই দুঃখ ও অপমান সহ্য করতে পারেনি সে৷ সে জন্যই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে৷’’ জানা গিয়েছে, সোমবার বিকালে বাড়ির কাছেই একটি গাছ থেকে মোতিলালবাবুর দেহ উদ্ধার হয়৷
ঘটনায় হতবাক মোতিলালবাবুর গোটা পরিবার৷ তার মেয়ের কথায়, ‘‘বাবার হাত থেকে মা-কে বাঁচাতেই পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম৷’’
মোতিলালবাবুর স্ত্রী শেফালীদেবী বলেন, ‘‘প্রায় দু’মাস ধরে আমার স্বামী সে ভাবে কাজ-কর্ম করতেন না৷ আমার থেকে টাকা চাইতেন৷ আমিও দিতে পারতাম না৷ সেজন্য খানিকটা অবসাদেও ভুগছিলেন৷’’
এদিকে ওই ব্যক্তিকে একদিন ধরে থানায় আটকে রাখা বা থানার লকআপে রেখে দেওয়ার কথা মানতে চায়নি পুলিশ৷ রাজগঞ্জ থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ছোট মেয়েটির কথাতেই দুপুরের দিকে আমরা ওই ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে এসেছিলাম৷ তাঁর স্ত্রী থানায় একটি অভিযোগপত্রও দিয়ে যান৷ কিন্তু তার কোনও রিসিভ কপি নেননি৷ আমরা একটি ঘরে বসিয়েই ওই ব্যক্তিকে বুঝিয়েছিলাম৷ এরইমধ্যে ওই রাতেই তাঁর স্ত্রী থানায় এসে অভিযোগপত্রটি ফিরিয়ে নেন৷ সেজন্য আবারও একবার বুঝিয়ে ওই ব্যক্তিকে ছেড়েও দেওয়া হয়৷’’ কিন্তু তিনি যে এমনটা করবেন তা তাঁরাও ভাবতে পারিনি৷ খবরটা শুনে খারাপ লাগছে৷
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি ঘটনাটি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন৷