ফাইল চিত্র।
অনেক দিন পরে ফের এনআরসি এবং এনপিআর প্রসঙ্গ ফিরে এলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। এবং সেটা তিনি তুললেন জলপাইগুড়িতে দাঁড়িয়ে, অসমে এনআরসি চালু হওয়ার পরে যে এলাকায় জোর ধাক্কা লেগেছিল। উত্তরবঙ্গের বহু বাসিন্দা কর্মসূত্রে এবং পরিবার সূত্রে অসমের সঙ্গে যুক্ত। সে রাজ্যে এনআরসি চালুর সময়ে তাঁদের অনেকের নাম বাদ পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। জলপাইগুড়ি তো বটেই, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারও সেই আতঙ্ক থেকে বাদ যায়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই মমতা এনআরসি প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভকে উস্কে দিয়েছেন।
এ দিন মমতা বলেন, “বলছে এনপিআর করবে, কিন্তু এনআরসি তো বাতিল করেননি। এনআরসি, এনপিআর সব এক। মনে আছে, অসমে এনআরসি করে ১৯ লক্ষ লোকের নাম বাদ দিয়েছিল। তাতে বাঙালি থেকে হিন্দিভাষী, গোর্খা সকলকে বাদ দিয়েছে।” এই প্রসঙ্গে অসমে একবার জাতিদাঙ্গার সময়ে সেখানকার বাসিন্দাদের আশ্রয় দেওয়ার কথাও মনে করিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্যাম্প করে আলিপুরদুয়ারে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল সে বার, বছর কয়েক আগের সেই শিবির দেখতে গিয়েছিলেন মমতা। অসমে এনআরসির সময়ে জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের বাসিন্দা বহু পরিবারের আত্মীয়দের নাম অসমের তালিকা থেকে কাটা যায় বলে সূত্রের দাবি। অনেকে ভয় পেয়ে অসম থেকে এ রাজ্যে চলে আসতে শুরু করেছিলেন। অসমে এনআরসি-র প্রতিবাদে বিশিষ্টজনেদের আন্দোলনও হয়েছিল উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায়। বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে এনআরসি প্রসঙ্গ তুলে সে সব মনে করিয়ে দেওয়ার কৌশলী চাল মমতা খেললেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উদ্বাস্তু প্রসঙ্গও তোলেন তৃণমূল নেত্রী। বিশেষত বিজেপির তরফে উদ্বাস্তু মহল্লায় গিয়ে এনআরসি করে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রচার চালানো হচ্ছে, এ দিন তারই জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেন, “সব উদ্বাস্তু কলোনিকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সকলকে পাট্টা দেওয়া হবে।’’ এই প্রসঙ্গে বিজেপিকে কটাক্ষের সুযোগ ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, “হয়ত পাট্টা পেতে একটু সময় লাগতে পারে, কিন্তু বিজেপির এনআরসি গাঁট্টা খেতে হবে না। এখন বলছে এনপিআর করবে। এনপিআর কি খায় না মাথায় দেয়?” এ দিনের সভার শুরুও নাগরিকত্ব প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মমতা। বক্তব্যের শুরুতে সকলকে অভিবাদন জানানোর সময়ে উল্লেখ করেন, ‘ওপার বাংলা থেকে এসে যাঁরা নাগরিক হয়েছেন’ তাঁদের কথাও। উত্তরবঙ্গে এসে মমতার ফের এনআরসি উস্কে দেওয়াকে মাস্টার স্ট্রোক বলে দাবি করেছে তৃণমূল। যদিও বিজেপির এক নেতার কথায়, “পাট্টা দেওয়া আর নাগরিকত্ব দেওয়া এক নয়। যাঁরা এখনও নাগরিকের মর্যাদা পাননি, তাঁরা সে দুঃখ বোঝেন। বিজেপি তাঁদের নাগরিকত্ব দেবে।”