ফাইল চিত্র।
চা শ্রমিকদের আন্দোলনের ‘স্লোগান’ বেঁধে দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস চারেক পরে সেই স্লোগানেই সিলমোহর দিলেন দলের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার হাসিমারার সুভাষিণী চা বাগানের প্রশাসনিক সভায় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘চা বাগানের শ্রমিকেরা কিছু পায় না। ওদের পিএফ দেয় না, ইএসআই দেয় না।’’ গত বছরের সেপ্টেম্বরে মালবাজারে চা শ্রমিক সংগঠনের সভায় বকেয়া পিএফ মেটানোর দাবিতে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও থেকে ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। তার পরে জলপাইগুড়িতে আঞ্চলিক পিএফ অফিসে ঘেরাও করেছিল তৃণমূল। তাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকও। এ দিন হাসিমারার সভামঞ্চেও ছিলেন শ্রমমন্ত্রী। মঞ্চের সামনে দর্শকাসনে ছিলেন অভিষেকও। মমতা বলেন, ‘‘আমি মলয়দের (শ্রমমন্ত্রী) বলব, আন্দোলন আরও তীব্রতর করতে হবে। পিএফের টাকা, ইএসআই, গ্র্যাচুইটি যেন চা শ্রমিকেরা পায়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের সভা ছিল চা বলয়ের মাঝে। এক দিকে আলিপুরদুয়ারের চা বাগান, অন্য দিকে জলপাইগুড়ি জেলার চা বাগান। এ দিন ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পে চা শ্রমিকদের বাড়িরও প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করা হয়। ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পের বাড়িগুলির প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যসচিবকে (হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী) বলব, আমার জন্যও একটা বাড়ি রেখে দিতে। এর পরে যখন আসব চা সুন্দরীতে থাকব।’’ চা বাগানের কিছু জমি নিয়ে পাট্টা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করতেও মুখ্যসচিবকে এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘চা বাগান থেকে কিছুটা জমি রিজ়িউম করে যদি পাট্টা দিতে পারি। সবাই যদি একমত হয় আমরা এই প্রসেস ইমিডিয়েট শুরু করব। চা সুন্দরী যেমন করব, যাকে ঘর দিতে পারছি না তাকে আমরা পাট্টাও করে দেব। চা বাগানের জমি তো বলতে গেলে আমাদেরই জমি। আমাদের জমিটা আমরা চা বাগানের মালিকদের রিকোয়েস্ট করব, যাতে চা বাগানের শ্রমিকরা পায়।’’
কাজের সময়ে মহিলা চা শ্রমিকদের শিশুদের রাখার জন্য ১১৩টি ‘ক্রেশ’, ৪৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিছু ক্রেশ এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সূচনাও হয়েছে এ দিন। চা বাগানে গড়ে ওঠা নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আংশিক সময়ের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী দেবে রাজ্য সরকার। চা শ্রমিকদের রাজ্য সরকারের তরফে পরিচয়পত্রও এ দিন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত সেপ্টেম্বরে মালবাজারে সভা করে ক্রেশ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরিচয়পত্রের ‘দাবি’ তুলেছিলেন অভিষেক। সেগুলিরই সরকারি সূচনা এ দিন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘‘চা শ্রমিকরা যারা কাজ করতে যায়, তাদের বাচ্চাদের কোথায় রাখবে। একটা চিন্তা হয়। কেউ পিঠের মধ্যে বাচ্চা বেঁধে মিয়ে যায়। বাচ্চাটাও বেচারা ভাল করে ঘুমোতে পারে না, থাকতে পারে না, খেতে পারে না। তাই তাদের জন্য চিন্তা ভাবনা করে আমরা ১১৩টা ক্রেশ তৈরি করে দিচ্ছি। মায়েরা যখন কাজ করতে যাবে বাচ্চাটাকে সেখানে রেখে যাবে। আজকে ২৪টা প্রথম পর্যায়ে আমরা করে দিয়েছি। আমি বলবো ক্রেশগুলো তাড়াতাড়ি করে দিতে।’’
গত লোকসভা ভোটের পরে, বিধানসভা ভোটেও চা শ্রমিকদের একটা ভাল অংশের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে বলে তৃণমূল নেতারা মনে করেন। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গত লোকসভার থেকে বিধানসভায় চা বলয়ে দলের ফল ভাল হয়েছে। লোকসভায় বিজেপি এগিয়ে থাকলেও বিধানসভা ভোটে মালবাজারে জিতেছে, তৃণমূল। রাজনৈতিক পর্য়বেক্ষকদের অনুমান, খানিকটা জমি ফিরে পাওয়ায় বিধানসভা ভোটের পর থেকেই চা শ্রমিক সংগঠনে ‘নজর’ দিয়েছে তৃণমূল।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত ভোট। সেই চা বলয়ের সভা থেকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়েছেন চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, চা শ্রমিকদের মজুরি আমরা বারবার চেষ্টা করে বাড়িয়েছি।’’
লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডুয়ার্সে সভা করে চা বাগান খোলার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সে প্রসঙ্গ টেনে তবে কারও নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভোটের আগে বলে গেল বান্দাপানি-সহ সব চা বাগান খুলে দেব। আজ পর্যন্ত কিছুই করেনি। শুধু ঘর খালি করে দিয়েছে, গোলমাল পাকিয়েছে।’’
জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ের দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার চা শ্রমিকদের জন্য বাজেটে সংস্থান রেখেছে। চা বাগানে যে কল্যাণমূলক কাজ হচ্ছে, সবই কেন্দ্রের টাকায়।’’