মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
উত্তরবঙ্গে এসে রাজবংশী ভাষার দু’শোটি প্রাথমিক স্কুল উদ্বোধন করার কথা জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার জলপাইগুড়ির বানারহাটে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভা থেকে কোচবিহারে কী-কী করা হয়েছে, তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে কোচবিহার জেলায়। রাজবংশী, কামতাপুরী, কুরুক ভাষাকে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি। রাজবংশী ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ড, নস্যশেখ ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করা হয়েছে। রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি জলপাইগুড়ি সদরে তৈরি হয়েছে। রাজবংশী সংস্কৃতি প্রসারের জন্য আলিপুরদুয়ার জেলায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজবংশী কালচারাল অ্যাকাডেমি হচ্ছে।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘‘২০০টি রাজবংশী ভাষার স্কুল সরকার অনুমোদন করেছে। আমি খুব শীঘ্রই যাচ্ছি। কোচবিহারে গিয়ে এগুলোর উদ্বোধন করে দেব।’’
মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা বংশীবদন বর্মণ। ওই স্কুলগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন মূলত বংশীবদনই। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলা কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে সেই স্কুলগুলির কোনওটি ২০১৩ সাল কোনওটি ২০১৪ সাল থেকে চলছে। এত দিন বেসরকারি হাতে ছিল স্কুলগুলি। সম্প্রতি রাজ্য সরকার এগুলিকে হাতে নিয়েছে। নভেম্বর মাস থেকে ওই স্কুলে নিযুক্ত শিক্ষকেরা রাজ্যের শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে নিয়োগ পত্রও পেতে শুরু করেছেন। বংশীবদন বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ওই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে কোচবিহারে এসে ওই স্কুলগুলির উদ্বোধন করবেন। আমরা রাজবংশী সমাজের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেব।’’
রবিবার রাজ্যের মুখ্যসচিব হরেকৃষ্ণ দ্বিবেদী কোচবিহারে এসে বংশীবদনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ওই স্কুলগুলির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনাও হয়।
‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর আর এক নেতা নগেন্দ্র রায় তথা অনন্ত মহারাজ বর্তমানে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। তিনি যদিও ওই স্কুল নিয়ে আশাবাদী নন। তাঁর কথায়, ‘‘ওই স্কুলগুলি রাজ্য সরকারের হাতে নেওয়ার বিষয়টি একটি
রাজনৈতিক খেলা। যাঁদের রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির দায়িত্বে রাখা হয়েছে, তাঁদের এই ভাষা সম্পর্কে কোনও জ্ঞান নেই। অন্যদের কী শেখাবেন? আমি আমার বাচ্চাকে ওই স্কুলে পড়াব না। কেউই পড়াবেন বলে মনে হয় না।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ওই স্কুলগুলির নাম করে কিছু লোককে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার রাজবংশী নেতা পার্থপ্রতিম রায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অনন্ত রায় বিজেপির জুতোতে পা গলিয়েছেন। উনি এ সব কথা না বলে সংসদে গিয়ে রাজবংশী ভাষার স্বীকৃতির দাবি করুন। আমরা অত্যন্ত খুশি, মুখ্যমন্ত্রী যা কথা দিয়েছেন,
তা রেখেছেন।’’