রজব আলিকে দেখে লড়াই শিখছে শক্তোলও

দিনের পর দিন কোনও একটি লোককে প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করতে দেখাটা সহজ কথা নয়। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের শক্তোল এলাকায় তাই রজব আলিকে দেখলে তাই এখনও মানুষ অবাক হয়ে চেয়ে থাকেন। তাঁকে সাহায্যের হাতটিও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:৪১
Share:

রজব আলি। ছবি: বাপি মজুমদার।

দিনের পর দিন কোনও একটি লোককে প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করতে দেখাটা সহজ কথা নয়। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের শক্তোল এলাকায় তাই রজব আলিকে দেখলে তাই এখনও মানুষ অবাক হয়ে চেয়ে থাকেন। তাঁকে সাহায্যের হাতটিও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাতে গোটা এলাকাটিই তাঁর লড়াইয়ে শরিক হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পুকুরে স্নান করতে গিয়ে দুই পা ভেঙে গিয়েছিল রজবের। তারপর সব মিলিয়ে চার বার। কখনও কোমরের চাকতি ভেঙেছে তো কখনও ফের নড়বড়ে হাঁটু গুঁড়িয়ে গিয়েছে। একের পর এক দুর্ঘটনার পর সে ভাবে চিকিত্সা করাতে পারেননি অভাবি বাবা। ৫০-এ পৌঁছেও শরীরের নিম্নাঙ্গ একই রকম রয়ে গিয়েছে। উচ্চতা মেরেকেটে তিন ফুট। চলাচলে একমাত্র ভরসা ট্রাই সাইকেল। কিন্তু সেই শৈশবেই শারীরিক বিকাশ থমকে গেলেও জীবনকে থেমে থাকতে দেননি মালদহের রজব আলি। প্রথমে হাতে ভর করে ও পরে ট্রাই সাইকেলে চেপে লড়াই চালিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। এখন পেশায় একটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক তিনি। বৃহস্পতিবার ছিল বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। কিন্তু বাড়িতে বসে থাকেননি। সকাল থেকে ট্রাইসাইকেলে চেপে ঘুরে বেরিয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের ভরসা জুগিয়েছেন। পরে স্কুলে গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের একই বার্তা দিয়েছেন যে, ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোর থাকলে বহু বাধাই অনায়াসে দূর করা সম্ভব।

হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এমন কাউকে পাওয়া দুষ্কর যিনি রজব আলিকে চেনেন না। কেননা চার দশক ধরে তার লড়াই দেখে আসছেন তাঁরা। বছর খানেক হল এলাকার রাস্তা পাকা হয়েছে। তার আগে ধুলো, মাটি কাদাভরা রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হত তাকে। সে সময়ে কখনও কেউ তাকে কোলে বা কাঁধে করে ভাঙা রাস্তা পার করে দিয়েছেন। ট্রাই সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাঠ থেকে ছুটে এসে চাষির পাশাপাশি পথচলতি পড়ুয়াও তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর চারপাশের সেই সাহায্য তাকে লড়াই করতে আরও সাহস জুগিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘‘রজবের লড়াই এলাকার মানুষকেও লড়াই করতে শেখাচ্ছে। চোখের সামনে রজবকে লড়াই করতে দেখে, অন্য কারণেও কেউ যদি ভেঙে পড়েন, তিনি উঠে দাঁড়াবেন বলে আশা করছেন। এটা খুবই একটা বড় কথা।’’

Advertisement

বাসিন্দাদের পাশাপাশি তাকে একডাকে চেনেন প্রশাসনের কর্তারাও। সেটা শুধু প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য নয়। শিক্ষকতায় তার নিষ্ঠার জন্যও। পাঁচ ছেলেমেয়েকে নিয়ে এখন ভরা সংসার তাঁর। দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। বড় ছেলে এবার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে মুক্ত বিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে হয়েছে রজবকেও। কেননা প্রাথমিক ও এসএসকে শিক্ষক, যাদের উচ্চমাধ্যমিক নেই বা থাকলেও ৫০ শতাংশ নম্বর নেই, তাঁদের তা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে!

রজব আলি বলেন, ‘‘১৫ বছর পর্য়ন্ত বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। কখনও বাইরের জগতে বের হতে পারব ভাবিনি। কিন্তু মনের জোর থাকলে যে অনেক কিছুই সম্ভব, তা জীবন দিয়ে বুঝতে পেরেছি। জীবনের যে কোনও বিপদই তাই এ বার কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement