কন্যাশ্রীতে সেরা কোচবিহার

ইংরেজি কবিতায় সোনাজয়ী বাংলা মাধ্যমের ছাত্রী মাধুরী

কন্যাশ্রী প্রকল্পে ইংরেজীতে কবিতা লিখে রাজ্যে প্রথম স্থান দখল করেছে কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম মারুগঞ্জের বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী মাধুরী গোস্বামী। মারুগঞ্জ হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মাধুরীর হাতে ১৪ অগস্ট কলকাতার নজরুল মঞ্চে আয়োজিত কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ওই পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে শংসাপত্র, ব্যাগ, কলম, ছাতা, ডিকশনারি, লেখার প্যাড ছাড়াও ১৫ হাজার টাকার চেক পেয়েছে মাধুরী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১১
Share:

দিদি মাধুরীকে মিষ্টিমুখ করিয়ে দিচ্ছে ছোট্ট মনীষা। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

কন্যাশ্রী প্রকল্পে ইংরেজীতে কবিতা লিখে রাজ্যে প্রথম স্থান দখল করেছে কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম মারুগঞ্জের বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী মাধুরী গোস্বামী।
মারুগঞ্জ হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মাধুরীর হাতে ১৪ অগস্ট কলকাতার নজরুল মঞ্চে আয়োজিত কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ওই পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে শংসাপত্র, ব্যাগ, কলম, ছাতা, ডিকশনারি, লেখার প্যাড ছাড়াও ১৫ হাজার টাকার চেক পেয়েছে মাধুরী। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে নেওয়া ওই পুরস্কার দেখাতে স্কুলে পৌঁছতেই মাধুরীকে অভিনন্দন জানাতে সহপাঠীদের ভিড় উপচে পড়ে। উচ্ছ্বসিত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও একে একে কৃতীকে শুভেচ্ছা জানান। সকাল থেকে প্রতিবেশী, পরিচিতরাও মাধুরীকে বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসেন। সব মিলিয়ে মাধুরীর এমন সাফল্যে খুশির হাওয়ায় ভাসছে গোটা এলাকা।
নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মাধুরীর সাফল্য গোটা জেলার বড় প্রাপ্তি। ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছি। কলকাতা থেকে ফিরেই ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানাব। সেই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে ওকে সংবর্ধনা জানানোর ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।” তুফানগঞ্জ ১ ব্লকের বিডিও রাজু লামা বলেন, “ওই ছাত্রীর সাফল্যে আমরা খুশি।”
স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, মাস দুয়েক আগে প্রশাসনের উদ্যোগে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য স্বরচিত কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মারুগঞ্জ হাইস্কুলের দু’হাজারের বেশি পড়ুয়ার মধ্যে ইংরেজিতে একমাত্র মাধুরীই যোগ দেন। কিন্তু তাতে এত বড় সাফল্য আসবে ভাবেননি কেউ। মারুগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “মাধুরী ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। লেখালেখির চর্চাও রয়েছে। কিন্তু একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে মাধুরী পুরস্কার নিয়েছে ভাবতেই আনন্দ, গর্বে বুক ভরে উঠছে।” কন্যাশ্রী প্রকল্পের মারুগঞ্জ হাইস্কুলের নোডাল শিক্ষক সৌমেন মজুমদার বলেন, “ও ইংরেজিতে বরাবর ভাল নম্বর পায়। তাই বলে কবিতা লিখে রাজ্যে প্রথম স্থান পেয়ে এ ভাবে গর্বিত করবে সত্যিই ভাবিনি। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ওর পুরস্কার নেওয়ার সাক্ষী হতে কলকাতার অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলাম।”

Advertisement

মাধুরীর বাবা মারুগঞ্জের দক্ষিণ মরাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা রাসবিহারী গোস্বামী পেশায় বীমা সংস্থার এজেন্ট। মা অর্পিতাদেবী গৃহবধূ। গোস্বামী দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে মাধুরী বড়, ছোট মেয়ে মনীষা প্রাথমিকের ছাত্রী। পড়াশোনার ফাঁকে গল্প, কবিতা লেখা মাধুরীর অভ্যাস। তাই কন্যাশ্রীর জন্য কবিতা লেখা প্রতিযোগিতা হচ্ছে জেনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেভাবে কাউকে কিছু না জানিয়েই কবিতাও লিখে ফেলে।

সোমবার বাড়ির দাওয়ায় বসেও বারবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে নেওয়া পুরস্কারে হাত বোলায় মাধুরী। পড়শি-পরিজনদের সব কিছু দেখায়। চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে? মাধুরীর জবাব, “আমি ইংরেজি মাধ্যমে পড়ি কিনা উনি জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলি, বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করছি। তা শুনে ভবিষ্যতে আমাকে ইংরেজি নিয়ে চর্চা করতে উৎসাহ দিলেন তিনি। সবটা এখনও কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে।” আপাতত তার পাখির চোখ অবশ্য মাধ্যমিক। উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল হলে ইংরেজি চর্চা বাড়াতে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানায় মাধুরী। রাসবিহারীবাবু বলেন, “মেয়ে একটু আধটু লিখত। সেই অভ্যাস মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তির স্বীকৃতি এনে দেওয়ায় ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement