প্রতীকী চিত্র।
নাগরিক পঞ্জি-র আতঙ্কে অসমের বহু বাসিন্দা এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন রাজবাড়ির জেলা কোচবিহারে। নোটবন্দির সময় এই জেলাই দেখেছে, নিজেদের এটিএমে টাকা নেই, অথচ অসমের এটিএম থেকে হাসি মুখে বেরোচ্ছেন বাসিন্দারা। ভোটের আগে কোচবিহার শহরের থেকে দিনহাটা, বক্সিরহাটের চায়ের আড্ডা, উঠোনের সভায় ঘুরেফিরে এল বাস্তব জীবনের নানা ঘটনাই।
এনআরসি: কোচবিহার শহর ঘেঁষে বয়েছে তোর্সা নদী। বছরপাঁটেক আগেও বাঁধ বলতে মাটি-পাথুরে পথ বুঝতেন বাসিন্দারা। এখন বাঁধের ওপর দিয়ে চকচকে পিচ রাস্তা। বাঁধ-রাস্তা থেকে নদীর মাঝে বহু বাড়ি। সেই বাড়ির বাসিন্দা মুদি দোকানদার বললেন, “আমার জন্ম তো এখানেই। শুনেছি বাপ-ঠাকুরদা বাংলাদেশ থেকে এসেছিল। কিন্তু ওদের জন্মের কোনও কাগজই তো নেই আমার কাছে। দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে না তো!”
অসম সীমানা: বক্সিরহাট থেকে কয়েক পা এগোলেই অসমের গ্রাম। বেসরকারি সংস্থার নীচু পদে চাকরি করা মহম্মদ নিয়াজ বললেন, “চাচাতো বোনের নিকায় আমন্ত্রিতদের খাওয়াতেও পারিনি। অথচ দেখেছি অসমের গ্রাম এটিএমের টাকা পেয়েছিল। শুনেছি, দিল্লি নাকি ইচ্ছে করেই আমাদের টাকা পাঠাত না।”
নিশীথ এফেক্ট: দিনহাটা স্টেশন থেকে বের হয়ে বাঁক নিতেই একটি চায়ের দোকান। চারদিকে বিজেপির পতাকায় ছড়াছড়ি। প্রার্থীর ছবি দেওয়া হোর্ডিং। এবার প্রথম দিনহাটা থেকে লোকসভা ভোটে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। নিশীথ প্রামাণিক। লোকে বলে দিনহাটাকে চেনেন হাতের তালুর মতো। ঘরের ছেলে-কে দিনহাটাও চেনে বিলক্ষণ, এমনও বলেছেন অনেকেই। চায়ের দোকানে বসা স্কুল শিক্ষক বললেন, “এই তো ক’দিন আগে বিজেপি বাংলা ছাড়ো ব্যানার হাতে মিছিল করতে দেখলাম ওকে (নিশীথ প্রামাণিক)। এখন বিজেপির হয়ে ভোট চাইতে মুচকি হাসছে, বোধ হয় নিজেও লজ্জা পাচ্ছে।”
পঞ্চায়েত আতঙ্ক: কোচবিহার স্টেডিয়ামের পাশেই জমজমাট আড্ডা। দেখা মিলল ২০১১তে পরিবর্তনপন্থী বলেই পরিচিত নাট্যকর্মী কল্যাণময় দাসের। বললেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে তৈরি হওয়া আতঙ্কের পরিবেশ কাটানোই আমার কাছে ভোটের অন্যতম বিষয়।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দুই সতীর্থের লড়াই: দু’জনেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কমল গুহের বকা খেয়েছেন। দু’জনেই এক ঘরে বসে কমল গুহের সঙ্গে আড্ডাও দিয়েছেন। কমল গুহ পরবর্তী ফরওয়ার্ড ব্লকে উত্তরবঙ্গের দুই ছিলেন পরেশ অধিকারী গোবিন্দ রায়। পরেশবাবু এখন তৃণমূল প্রার্থী। বামপন্থীদের আশঙ্কা, দলের পুরোনো নেতা পরেশবাবু ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের ভোট টেনে নেবেন না তো। আবার বাম আমলে রাজ্যের মন্ত্রী পরেশবাবুকে দলের প্রার্থী করায় একসময়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের হাতে মার খাওয়া তৃণমূলীদের ভোট অন্য বাক্সে চলে যাবে না তো? তৃণমূলের পার্টি অফিসে বসে সেই আশঙ্কাও শোনা গেল।
বিমানবন্দর: ঝোড়ো হাওয়া হলে যখন কাশের মাথা দুলতে থাকে, আগাছার ঝোপ একপাশে নুয়ে পড়ে তখন দেখা যায় একফালি রানওয়ে। জেলাশাসকের বাংলোর পাশেই কোচবিহার বিমাবন্দর রয়ে গিয়েযে শুধু সাইনবোর্ডেই। ভোট এলে বাসিন্দারা বিমানবন্দর প্রসঙ্গ শুনতে পান নেতা-নেত্রীদের মুখে। ভোট প্রচারে ওজনদার এলে দু একটা কপ্টার নামে। বাকি দিনগুলি রাজবাড়ির ঘরগুলির মতোই রাজ আমলের বিমানবন্দর শুধু যেন স্মৃতির সংগ্রহশালা।