প্রতি বছরই কোনও না কোনও ভোট লেগে থাকে এই বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশে। বিধানসভা, পঞ্চায়েত, লোকসভা, পুরসভা ভোটে উঠে আসে বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যার কথা। তার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোও পাল্লা দিয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয়। পঞ্চায়েত বা পুরসভা নির্বাচনে স্থানীয় সমস্যাগুলিই প্রাধান্য পায়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা নির্বাচিত হয়। সংসদে তৈরি হয় বিভিন্ন আইন। দেশের কল্যাণে অনেক প্রকল্প সংসদ থেকেই তৈরি হয়। কাজেই দেশ তথা জাতির উন্নয়নে ভারতের মতো বিশাল গণতান্ত্রিক দেশে লোকসভা নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ আদিবাসী সমাজ। যাঁরা এই দেশের আদি বাসিন্দা। এবং এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে পড়াও বটে। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আদিবাসী সমাজের তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। এখনও তাঁরা বঞ্চিত, শোষিত শ্রেণির পর্যায়েই রয়ে গিয়েছেন। ভারতের সংসদই পারে আদিবাসীদের উন্নয়ন করতে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যে দলের প্রার্থীই জিতে সাংসদ হোন না কেন, তাঁর কাছে আমার একটাই আবেদন, আদিবাসীদের জন্য কিছু ভাবুন, কিছু করুন। তাঁদের জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা ভূমিহীন হয়ে পড়ছেন। তাঁদের জমি রক্ষার জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা হোক।
বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে আধারকার্ড-সহ একাধিক শংসাপত্র দরকার। কিন্তু আগাগোড়া অফিস আদালত বিমুখ আদিবাসীরা এখনও এই বিষয়ে সচেতন নয়। এই কারণে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় নিয়মিত সরকারি প্রকল্প নিয়ে সচেতনতা, সরকারি সুবিধা সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় তৈরি করা দরকার। স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতনতার প্রচার দরকার। সচেতনতার অভাবে তাঁদের স্বাস্থ্য ভেঙে যাচ্ছে, নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা একান্ত দরকার।
এ সব কাজ একমাত্র সাংসদদের পক্ষেই সম্ভব বলে আমি মনে করি। এক জন সাংসদ যেমন নিজের এলাকায় কাজ করতে পারেন। তেমনই তাঁর এলাকার সমস্যা গোটা দেশের সামনে তুলে ধরে তার সমাধান করার ক্ষমতাও রাখেন।
কাজেই নির্বাচন এলে শুধু গাল ভরা প্রতিশ্রুতি নয়, সমাজের জন্য কাজ করলেই দেশ এগোবে। তাই আশা করব, এই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীরা এই বিষয়গুলো নিয়ে একটু ভাবুন।
লেখক: আদিবাসী কবি ও সাহিত্যিক
অনুলিখন: নীহার বিশ্বাস