খুশি: প্রার্থীপদ ঘোষণার পরে দশরথ। ছবি: নারায়ণ দে
কারণ দু’টি। প্রথমত, তিনি ভূমিপুত্র। কুমারগ্রাম বাগানে জন্ম ও বড় হওয়ার সুবাদে রাজনীতিতে প্রবেশ করে চা শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার বড় একটা অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয়ত, দলের সব গোষ্ঠীর নেতা তো বটেই, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা। আর এই দুইয়ের জেরেই আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে ফের তৃণমূলের টিকিট পেলেন একদা বাম সরকারের মন্ত্রী দশরথ তিরকে। প্রার্থী হিসেবে দশরথের নাম ঘোষণার পরে তৃণমূলের ঘরোয়া আলোচনায় অন্তত উঠে আসছে তেমনটাই।
আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে বিজেপির সাম্প্রতিক বাড়বাড়ন্ত নিঃসন্দেহে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের কপালে। বিধানসভা ভোটে মাদারিহাট কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন মনোজ টিগ্গা। পঞ্চায়েত ভোটেও জেলার কিছু অংশে ভাল ফল করেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে এ বারের লোকসভা ভোটে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাকে প্রার্থী করেন, সেটা নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল জেলা রাজনীতিতে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দশরথবাবু ছাড়াও আরও দু’টি আবেদন জমা পড়েছিল দলের রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। এই অবস্থায় দশরথবাবুকেই দল ফের টিকিট দেবে, নাকি প্রার্থী হবেন অন্য কেউ— মূলত এই দুই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছিল দলের নেতা-কর্মীদের মনে।
কুমারগ্রাম চা বাগানে জন্ম ও বড় হওয়া দশরথের রাজনীতির শুরুটাও হয়েছিল সেখান থেকেই। ১৯৯৮ সালে প্রথম পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন তিনি। ২০০১ সাল থেকে টানা তিন বার আরএসপি-র টিকিটে বিধায়ক হন। বাম সরকারে সামলেছেন পূর্ত দফতরে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। রাজ্যে পালাবদলের পর অন্য অনেকের মতো দশরথও তৃণমূলে যোগ দেন। আরএসপি করার সময় জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার মানুষ ও চা শ্রমিকদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে ২০১৪ সালে তাঁকেই আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী করে তৃণমূল। সে বারে জয়ী হন তিনি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুমারগ্রামে তৃণমূলকে রীতিমতো বেগ দেয় বিজেপি। যার জেরে দলের অনেকে কুমারগ্রামের বিধায়ক জেমস কুজুরের পাশাপাশি দশরথবাবুর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। যদিও তৃণমূলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব দশরথের পাশেই দাঁড়ান। কুজুরের মন্ত্রিত্ব গেলেও তাঁর পাশে থাকেন রাজ্য শীর্ষ নেতৃত্বও। তৃণমূলের এক জেলা শীর্ষ নেতার কথায়, দলের সব গোষ্ঠীর নেতাদের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে দশরথের। তাই সকলে এ বারও তাঁকেই প্রার্থী হিসেবে চেয়েছেন। দশরথও এ দিন বলেন, ‘‘দিদি ফের আমাকে মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই ওঁকে প্রণাম জানাই। আমার জেলা নেতাদের আশীর্বাদের হাতও আমার মাথায় থাকায় তাঁদের ধন্যবাদ।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোহন শর্মা বলেন, ‘‘দশরথ তিরকে হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী। আলিপুরদুয়ারের মানুষ ফের তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।’’