প্রতিবাদ করতেও ভয় পাই, শিল্পীরা থেকে যাই অন্ধকারে

দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা ভোট। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সামাজিক ও অার্থিক ভেদাভেদ ছাপিয়ে প্রতিনিধি বেছে নেন মানুষ। কিন্তু নাগরিক সুযোগ-সুবিধার বাইরে বাস করা আমজনতা এই গণতন্ত্রের অধিকারকে কী চোখে দেখেন?

Advertisement

অশোক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ১২:১৮
Share:

নানা দলের প্রার্থীরা প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। বাড়ির ফাঁকা দেওয়াল ভরে গিয়েছে নানা স্লোগানে, প্রার্থীদের প্রচারে।

ভোট আসে। চলেও যায়। ভোটের দামামা বাজলেই নেতা-মন্ত্রীরা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেন। তাতে বয়ে গিয়ে মানুষ তাঁদের মতও দেন। হয় সরকার গঠন। কিন্তু দেখা যায় প্রতিশ্রুতি অনেক ক্ষেত্রে অধরাই থেকে যায়। বিশেষ করে বরাবরই ব্রাত্য থেকে যান লোকশিল্পীরা।

Advertisement

আমরা যাঁরা গম্ভীরা শিল্পী, তাঁদের কী হাল, চরম দারিদ্রের মধ্যে কী ভাবে আমরা জীবন-যুদ্ধে লড়াই করে টিকে আছি, সে নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। আগে ভোট এলে বিভিন্ন দলের তরফে বা নির্বাচন কমিশনের তরফেও বাসিন্দাদের উৎসাহিত করতে গম্ভীরা শিল্পীদের প্রচারে নামানো হত। এখন সেটাও বন্ধ। হালে রাজ্য সরকার ভাতার একটা ব্যবস্থা করেছে বটে কিন্তু কেন্দ্র সরকার? কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রে যে সরকারই থাকুক না কেন, গম্ভীরা শিল্পীদের ভাতা দেওয়া তো দূরের কথা কেন্দ্রে লোকশিল্প প্রসারের কোনও অনুষ্ঠানেও গম্ভীরা শিল্পীদের কোনও দিন ডাক পড়ে না। এ হেন হতাশার মাঝে ফের ভোট।

নানা দলের প্রার্থীরা প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। বাড়ির ফাঁকা দেওয়াল ভরে গিয়েছে নানা স্লোগানে, প্রার্থীদের প্রচারে। ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন, ব্যানার, হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা। দিনভর কেউ হুডখোলা গাড়িতে হাসিমুখে হাত নাড়ছেন, আবার কেউ পদযাত্রা করে মানুষের কাছে ভোট চাইছেন। নানা দলের কেষ্টবিষ্টুরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ভোট ভিক্ষায় ব্যস্ত। আমাদের বাড়িতেও তাঁরা আসছেন ভোট প্রার্থনা করতে। কিন্তু আমরা কেমন আছি, একবারের জন্যও খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না তাঁরা। ভোট আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকা। কিন্তু সেই গণতন্ত্র আমাদের কী ভাবে রক্ষা করছে, সে খোঁজ নেওয়ার কেউই নেই।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মনে হয় প্রতিবাদ করি। মালদহের গম্ভীরা গানে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে সেই প্রতিবাদের একটা জায়গাও রয়েছে। গম্ভীরা একটা পুজো হলেও আদতে লোকনাট্য। এই লোকনাট্য একটি জীবন্ত মাধ্যম। এই গানের মধ্যে দিয়েই সমকালীন জীবন ও সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। সমাজকে সঠিক দিশা দিতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সত্তার একটা প্রেক্ষাপট গম্ভীরা গানে থাকেই। কিন্তু এখন সমাজে যে ভাবে হানাহানি, অসহিষ্ণুতা বেড়েছে, আমরা সেই প্রতিবাদের ভাষা যেন হারিয়ে ফেলছি।

একেই নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসার আমাদের। গম্ভীরা গানে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কথা বলতে গেলে যদি বিপত্তি আসে, তবে তো সংসারটা একেবারেই ভেসে যেতে পারে। সেই আতঙ্ক গ্রাস করেছে গম্ভীরা শিল্পীদের। কিন্তু ভোট যুদ্ধের নায়ক-নায়িকাদের কি তা নিয়ে ভাবার সময় রয়েছে? না, তাঁরা গণতন্ত্র রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। তাঁদের আমাদের মতো ছাপোষা শিল্পীর খবর রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। তাই ভোট আসে, চলেও যায়। আমরা গম্ভীরা শিল্পীরা অন্ধকারেই।

লেখক: গম্ভীরা শিল্পী, অনুলিখন: জয়ন্ত সেন

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement