প্রতীকী ছবি।
গণধর্ষণের শিকার এক নাবালিকাকে অভিযুক্তদের এক জনের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে ‘আদালতের বাইরে মীমাংসা’ করার আবেদন নিয়ে পুলিশ ও আইনজীবীদের ভর্ৎসনা করে কড়া রায় দেন বিচারক। গত বুধবার গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক (পকসো আদালত) মিন্টু মল্লিকের দেওয়া এমন রায় নিয়ে প্রবল চর্চা শুরু হয়েছে। আইনজীবীদের দাবি, এমন রায়ের খুবই দরকার ছিল। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আদালতের বাইরে এসব মামলার মীমাংসা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আইনের সঠিক বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন নির্যাতিতারা। এই রায়ের পরে ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে ভবিষ্যতে আইনের বিচার থেকে নির্যাতিতারা আর বঞ্চিত হবে না। আইনজীবী অভীক সিংহ বলেন, ‘‘এমন রায় সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক।’’
আদালত সূত্রে খবর, প্রায় এক বছর আগে গঙ্গারামপুর থানার বাসিন্দা ১৫ বছরের এক আদিবাসী মেয়েকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী তিন যুবকের বিরুদ্ধে। গঙ্গারামপুর থানায় অভিযোগ হতেই পকসো আইনে মামলা দায়ের হয়। মেয়েটির বয়ান আদালত লিপিবদ্ধ করে। এরই মধ্যে আদালতে একটি আবেদন জমা করেন মেয়েটির মা ও বাবা এবং এক অভিযুক্তের মা। তাদের আবেদন, মেয়েটির বয়স যখন আঠারো বছর হবে তখন তাদের দু’জনের বিয়ে দেওয়া হবে। তাই অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হোক।
এমন ‘অদ্ভুত’ ও ‘বেআইনি’, আবেদন দেখেই নড়েচড়ে বসেন বিচারক। তার পরেই তিনি রায় দেন। অভিযুক্ত তিন জনের জামিন বাতিল করে বিচারক রায়ে বলেন, যারা আদালতের বাইরে এই ‘বেআইনি’ মীমাংসার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে যে মা ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিতে সম্মতি দেন সেখানে মেয়ে নিরাপদ নয়, তাই বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাকে নিরাপত্তার সঙ্গে চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের কাছে রাখতে হবে।
গঙ্গারামপুর থানার আইসিকে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, এই নির্দেশের পরে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আগামী ১৬ অগস্টের মধ্যে আদালতে জানাতে হবে। সরকারি আইনজীবী প্রতুল মৈত্র বলেন, ‘‘অনেক সময়ই টাকার বিনিময়ে এমন বেআইনি কাজ হয়। বিচার পান না নির্যাতিতারা। এই রায় তাদের বিচার সুনিশ্চিত করতে সহায় হবে।’’ গঙ্গারামপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপকুমার দাস বলেন, ‘‘বিচারকের নির্দেশ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’