বিরোধিতা ও সমর্থন। (বাঁ-দিকে), তৃণমূলের মিছিল, (ডানদিকে) বামেদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
এনবিএসটিসি
এনবিএসটিসির দাবি এমনিতে রোজ ৫৫০টি বাস চলাচল করে। আজ, শুক্রবার ৬৫০টি বাস চালানো হবে বলে জানিয়েছেন এনবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ। যাত্রী পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে কোচবিহারে নিগমের সদর দফতর ছাড়াও চারটি ডিভিসন দফতরে সকাল থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। রাস্তায় বাস নিয়ে বেরিয়ে কোথাও কোন সমস্যা হলে কর্মীরা সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল রুমে জানাবেন। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ, প্রশাসনকে চটজলদি তথ্য দেবেন নিগম কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনে বাসে পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে।
বেসরকারি বাস
উত্তর দিনাজপুর বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিক জানান, শুক্রবারের বন্ধে গোলমালের আশঙ্কায় চালক ও খালাসিরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে কাজে যোগ দেবেন না বলে তাঁদের জানিয়েছেন। তাই ওই দিন বেসরকারি বাস রাস্তায় নামানো সম্ভব হবে না। কোচবিহার জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জিত পণ্ডিত বলেন, “আমরা বাস চালাতে আগ্রহী। শ্রমিকদের উপস্থিতি ও নিরাপত্তার উপর বাকিটা নির্ভর করছে।” তবে বালুরঘাট বাস ওনার্স অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক খোকন সেন বলেন, ‘‘বন্ধ করে কোনও সুরাহা হয় না। তাই রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে রাস্তায় সমস্ত রকম বেসরকারী যাত্রী বাস এবং ট্রাক লরি নামবে।’’
অটো, ম্যাক্সি-ট্যাক্সি
মালদহ জেলা প্রশাসন জেলার ব্যবসায়ী সংগঠন, বাস, ম্যাক্টি ট্যাক্সি সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনকে নিয়ে বৈঠক করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একাধিক স্থানে পুলিশ পিকেট করা হবে। ইংরেজবাজারের রথবাড়ি মোড়, পুরাতন মালদহের বুলবুলি মোড়, গাজল এবং কালিয়াচকের চৌরঙ্গী মোড়ে পুলিশ পিকেট থাকবে। কোথাও রাস্তা কিংবা জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বন্ধের দিন গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে রাজ্য সরকার মৌখিক ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও সরকারি নির্দেশিকা জারি করেননি। তাই মালিকপক্ষও ঝুঁকি নিয়ে ওই দিন রাস্তায় বাস, ট্রেকার, অটো সহ সমস্ত ধরনের যানবাহন চালানোর বিরোধী। শিলিগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকায় চলাচলকারী টোটোর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। টোটো সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে, শুক্রবার দিনভর রাস্তায় টোটো চলাচল করবে। বিশেষ করে স্কুল-অফিসের ব্যস্ত সময়ে প্রতিটি স্ট্যান্ডে যাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক টোটো থাকে তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি।
রেল
অসম থেকে কোচবিহারে যাতায়াতকারী বাস, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে অসম-বাংলা সীমানা এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিসনের ডিআরএম সঞ্জীব কিশোর বলেন, “আমরা ট্রেন চালাতে চাইছি।” কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, “জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
ব্যবসা-বাণিজ্য
ফেডারেশন অফ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের (ফোসিন) সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস জানান, ‘‘বন্ধে আমরা কাউকে দোকান খুলতেও বলিনি। আবার বন্ধ রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী ও পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর কুন্ডু জানান, ঝামেলা হলে ব্যবসায়ীর ক্ষতি হবে। সে জন্য তাঁরা শুক্রবারের বন্ধে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলা না রাখারই পক্ষে। নর্থবেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক পুরজিৎ বক্সিগুপ্ত বলেন, ‘‘যে কোনও ধর্মঘটই হোক না কেন, সেটা আমরা যেমন সমর্থনও করি না, আবার বিরোধিতাও করি না৷ শুক্রবারের ধর্মঘটের ক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থান একই থাকছে৷ আমরা ব্যবসায়ী বন্ধুদের উপরই বিষয়টি ছেড়ে দিচ্ছি৷ দোকান-পাট খোলা রাখবেন কি রাখবেন না পরিস্থিতি বুঝে তারাই ঠিক করবেন৷
শিল্প কেন্দ্র
কোচবিহারের চকচকা শিল্পতালুক স্বাভাবিক রাখতে চায় প্রশাসন। কিন্তু, বিষয়টি শ্রমিক ও কর্মীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন শিল্পোদ্যোগীরা। কোচবিহার জেলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শিল্পতালুকে ৪২টি কারখানা চালু রয়েছে। শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিলীপ বণিক বলেন, “কর্মী ও শ্রমিকরা এলে কারখানা খোলা থাকবে। আমরা সাংগঠনিক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।” কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির কর্তারা অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, সাংগঠনিকভাবে তারা যে কোন বন্ধের বিরোধী। তবে দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ব্যাপারে সংগঠনগত ভাবে কোনও হস্তক্ষেপ করা হয় না। সমিতির সম্পাদক সুব্রত সাহা বলেন, “দোকান, প্রতিষ্ঠান কেউ খুলবেন কি না, সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।” সমিতি সূত্রের খবর, কোচবিহার শহরে ৩০ হাজারের বেশি দোকানপাট আছে। কোচবিহার জেলায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা আড়াই লক্ষের বেশি। বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক হরেরাম সাহার বক্তব্য, কোনও ব্যবসায়ী বন্ধ করবেন না দোকান খোলা রাখবেন, সেই সিদ্ধান্ত তাঁদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
চা-ক্ষেত্র
চা বাগান খোলাই থাকার কথা। অন্তত ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা অমৃতাংশু চক্রবর্তী এমনই দাবি করেছেন। শুক্রবার বাগান বন্ধ রাখতে কর্তৃপক্ষকে কেউ বলেনি বলে তিনি জানিয়েছেন। তাই আর পাঁচটা দিনের মতোই শুক্রবারও চা-বাগান খোলাই থাকবে৷ সিটুর চা-বাগান মজদুর ইউনিয়ন রামলাল মুর্মু বলেন, ‘‘ধর্মঘট নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছি৷ বেশিরভাগ শ্রমিকই ধর্মঘটের পক্ষে৷ ফলে চা-বাগানে ধর্মঘট ভালই হবে বলে মনে হচ্ছে৷ তবে যারা আমাদের বিরোধী তাঁরা হয়ত কাজে যাবেন৷ আমরা তাঁদের আটকাবো না৷’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিপিএম ও সিটুকে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, শুক্রবার চা-বাগনে ওরা ধর্মঘট করতে পারবে না৷ আমরা করতে দেব না৷ ধর্মঘট ব্যর্থ করতে আমরা রাস্তায় থাকব৷’’ জেলা সিপিএমের সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, ‘‘শুক্রবার আমরাও রাস্তায় থাকব৷ আর রাস্তায় থেকেই ধর্মঘটকে সর্বতো ভাবে সফল করব৷ রাজ্য সরকার বাধা দিলে ‘ফাইট’ হবে৷ চা-বাগানেও অবশ্যই ধর্মঘট হবে৷’’
দার্জিলিং কী বলছে
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘আমরা এই বন্ধের বিরোধী। পাহাড় স্বাভাবিক থাকবে।’’ দার্জিলিং-শিলিগুড়ি ইউনাইটেড ট্যাক্সি সিন্ডিকেটের সভাপতি কাঞ্চন গুরুঙ্গ বলেন, ‘‘আমরা গাড়ি চালাব। প্রশাসন সব রকম সাহায্য করবে বলেছে।’’ দার্জিলিং হিমালয়ান টয় ট্রেন (ডিএইচআর)-এর মুখপাত্র নরেন্দ্র মোহন জানিয়েছেন, টয় ট্রেন চলবে। দার্জিলিং-এর জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ‘‘জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সবরকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
শিক্ষা ক্ষেত্র
রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক থাকবে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেও সব বিভাগ এবং কলেজে হাজিরা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ জারি করেছেন কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী, সকাল দশটার মধ্যে সকলকে অফিসে সই করার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট সব আধিকারিক-কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। পঠন-পাঠন এবং অফিসের কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে যাবতীয় পদক্ষেপ হয়েছে।’’
গোলমালে না
বন্ধ হবে না বলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। উপরন্তু, শুক্রবারই রাজ্যের ব্লকে ব্লকে সিঙ্গুর দিবস পালিত হবে। গোলমালের আশঙ্কাও কম নেই। অতীতে বন্ধের দিনে গাড়ি ভাঙচুর, বোমাবাজি, মারধরের ঘটনাও কম ঘটেনি। এ সব মাথায় রেখেই সতর্ক ভাবে পা ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের সিপিএম নেতারা। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেছেন, ‘‘হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, শান্তিপূর্ণ ভাবে বন্ধের সমর্থনে প্রচার চালান যাবে। আমরা বনধ সফল করার আবেদন করার জন্য রাস্তায় নামব। উসকানি থাকতে পারে।