উষ্ণায়নের জেরে উত্তরে কমছে বৃষ্টিপাত

আষাঢ়-শ্রাবণে টানা বৃষ্টিতে থইথই করে চারিদিক। কিন্তু এ বছর সব যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ বার গোটা জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৫০০ মিলিমিটারের মতো। অথচ অন্য বছর তা দেড় হাজার মিলিমিটারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫১
Share:

‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে / আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।’ আষাঢ় গিয়েছে, শ্রাবণও প্রায় শেষের পথে। কিন্তু বৃষ্টির সুবাস যেন আর পাচ্ছে না কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গ।

Advertisement

আষাঢ়-শ্রাবণে টানা বৃষ্টিতে থইথই করে চারিদিক। কিন্তু এ বছর সব যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ বার গোটা জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৫০০ মিলিমিটারের মতো। অথচ অন্য বছর তা দেড় হাজার মিলিমিটারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। শুধু তাই নয়, কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে বছরে সাড়ে তিন মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টিপাত হয়। সেখানে এ বছর এখন পর্য়ন্ত বৃষ্টিপাত দুই হাজার মিলিমিটারও পৌঁছয়নি। যার প্রভাব সাধারণ জনজীবন থেকে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিমাণে পড়েছে।

উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ মৌসম সেবা কেন্দ্রের নোডাল অফিসার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উষ্ণায়নের জেরে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। তার ফল পাচ্ছি আমরা। কোচবিহার-জলপাইগুড়ির মতো ভারী বৃষ্টিপাতপ্রবণ অঞ্চল এখনও শুখা হয়ে উঠছে। অন্য দিকে, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে, টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে।’’ এই অবস্থায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কৃষকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এই সময়ে সাধারণত বৃষ্টির উপর নির্ভর করে আমন ধান থেকে শুরু করে নানা ধরনের চাষ হয় কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গে। এই সময়ে পাট উঠে যায়। সেই চাষেও বৃষ্টির কথা মাথায় রেখেই করা হয়। কিন্তু এ বার অনাবৃষ্টিতে অসুবিধার মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। কোচবিহার জেলা কৃষি আধিকারিক বুদ্ধদেব ধর জানিয়েছেন, জুলাইয়ের প্রথম দিকে কিছু বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তাতে অবস্থা ঠিক ছিল। কিন্তু পরের দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যে সব জমিতে জলের কারণে ধান সম্ভব হবে না, সেখানে কলাই বা ভুট্টা চাষ করতে হবে। আশ্বিন পরে গেলে সর্ষে চাষ করা যাবে। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। সেই হিসাবে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।’’

কিন্তু শুধুমাত্র কৃষিক্ষেত্রেই নয়, পরিবেশের উপরেও তার প্রভাব পড়ছে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, ‘‘সামুদ্রিক ঝড় কমে গিয়েছে। সে কারণেই গোটা দেশে ষাট শতাংশ বৃষ্টিপাত কমে গিয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এই আবহাওয়া খুব বিপজ্জনক। কৃষিক্ষেত্রে খুব অসুবিধেয় পড়তে হবে। নানা রোগের মুখেও পড়তে হবে।’’

আবহাওয়ার পরিবর্তনে সাধারণ মানুষকেও অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। আবার চর্মরোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। দেখা গিয়েছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগেও প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

কোচবিহার হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন বলেন, ‘‘চর্মরোগীর সংখ্যা দীর্ঘদিন ধরেই বাড়ছে। তা জলের কারণে হতে পারে। এ ছাড়া, ডায়েরিয়া বা জ্বরের কয়েকজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement