রবিবার শিলিগুড়ির ডাঙ্গিপাড়ায় প্রচারে অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
স্থায়ী পুরবোর্ডের পাশাপাশি স্থানীয় নাগরিক পরিষেবাকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়লেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর রবিবার ছিল প্রথম ছুটির দিন। আর তা হাতছাড়া করতে চাননি কোনও শহরের অধিকাংশ প্রার্থীরাই।
অশোকবাবুও এর ব্যতিক্রন নন। এবার পুরভোটে অশোকবাবুকে সামনে রেখেই ভোটযুদ্ধে নেমেছে বামফ্রন্ট। আড়াই দশকের রাজ্যের এই প্রাক্তন মন্ত্রীকে পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর কর্মীরা প্রচারে নেমে পড়েন। অশোকবাবুরও কয়েক দফায় এলাকায় মিছিল, কর্মিসভা করেন। এদিনই প্রথম ছুটির দিন দুই ঘন্টা হেঁটে বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার সারেন অশোকবাবু।
ডাঙিপাড়া থেকে গাঁজাগলি, মহানন্দাপাড়া থেকে হিলকার্ট রোড লাগোয়া এলাকায় সর্বত্র হাতজোড় করে ঘোরা শুধু নয়, লোকজনের বাড়িতে ঢুকেও তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা গিয়েছে এই সিপিএম নেতাকে। অনেকেই আবার দরজা খুলে এগিয়ে এসে অশোকবাবুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সমস্যার কথাও জানান। পরে অশোকবাবু বলেন, “আমরা স্থায়ী, দুর্নীতিমুক্ত পুরবোর্ড গড়তে চাই। এদিন বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে মানুষকে তাই বলছি। সেই সঙ্গে ওয়ার্ডের বেহাল নাগরিক পরিষেবা নিয়েও অনেক কাজ করতে হবে। নিকাশি, রাস্তাঘাট-সহ বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ সুবিধা ঠিকঠাক নেই।”
অশোকবাবু জানান, এবার আমাকে বহু ওয়ার্ড থেকে পার্টি কর্মীরা ছাড়াও বাসিন্দারা দাঁড়াতে অনুরোধ করেছিলেন। ছয় নম্বর ওয়ার্ডও তারমধ্যে অন্যতম। আমার প্রতিবারের বিধানসভা ভোটে এই ওয়ার্ড আমার পাশে থেকেছে। ওয়ার্ডটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত তো বটেই বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। একেবারে শহরের প্রাণকেন্দ্র হিলকার্ট রোড লাগোয়া এলাকাটির গত চার বছরে সঠিকভাবে উন্নয়নই হয়নি। আগামীতে সেই কাজগুলি করতে হবে।
অশোকবাবু’র প্রচারকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী তথা সদ্য প্রাক্তন কাউন্সিলর রুমা নাথ। রুমাদেবীও সকাল থেকে চানাপট্টি, মহানন্দপাড়া এলাকায় প্রচার করেন। দুপুরের পর থেকে অবশ্য তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, “গতবার জিতেছিলাম। তার আগে তো ২৮ বছর সিপিএমই ওয়ার্ডের দখল রেখেছিল। কী করেছিল ওঁরা? আমি চার বছরে রাস্তা, জল,পথবাতি, পার্ক-সহ বিভিন্ন কাজ সাধ্যমত করার চেষ্টা করেছি। এলাকার মানুষ তা দেখেছেন।”
গত ২০০৯ সালের ছয় নম্বর ওয়ার্ডটি প্রায় তিন দশক পর বামেদের হাতছাড়া হয়েছিল। সেবার কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটপ্রার্থী হয়েছিলেন রুমাদেবী। এবার অবশ্য পুরভোটে জোট নেই। কংগ্রেসের পাশাপাশি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূলও। জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি অরূপরতন ঘোষকে প্রার্থী করা হয়েছে। তবে তাঁর প্রার্থীপদ নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ বিক্ষোভ রয়েছে। তালিকা ঘোষণার পর থেকেই একদল তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা রাস্তা নেমে প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু করেছেন। প্রকাশ্যে জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে আলম খানকে প্রার্থী করার দাবিতে সরব হয়েছেন।
এসবের মধ্যেই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে রবিবার, ছুটির দিন আর হাতছাড়া করতে চাননি তৃণমূল প্রার্থীও। দলীয় অনুগামী নিয়ে সকালে তিনি ডাঙিপাড়া, মহানন্দপাড়ায় এলাকা ভিত্তিক প্রচার করেন। সন্ধ্যায় ডাঙ্গিপাড়ায় প্রচারে যান জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। প্রার্থীকে সামনে রেখে মন্ত্রী কর্মীদের নিয়ে একটি সভা করেন। রাতে অরূপবাবু বাড়ি বাড়ি আরেক দফায় ঘোরেন। তিনি বলেন, “ওয়ার্ড দীর্ঘদিন সিপিএম এবং পরে কংগ্রেসের দখলে ছিল। আমরা বলছি, এবার আমাদের সুযোগ দেওয়া হোক।”