লতা সরকার। নিজস্ব চিত্র
তখন রোদের প্রখর তেজ পড়ছে মাথার উপরে। বাজারের রাস্তায় ছাতার ছায়ায় মাথা বাঁচিয়ে বসে লতা। তাঁর সামনে গাঁদা ফুলের মালার পাহাড়।গ্রাহক আসছেন, যাচ্ছেন। কেউ ফুল কিনছেন, কেউ কিনছেন না হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলছেন লতা। কমবয়সি মেয়েদের সঙ্গে আলাপচারিতায় দিচ্ছেন ‘স্বাবলম্বী’ হওয়ার পাঠ। অনেকেই শুনছেন তাঁর কথা, শুনছেন তাঁর জীবন-সংগ্রামের কাহিনী। কারও কারও কথায়, লতা নিজে ‘দুর্গতিনাশিনী’। মুখ টিপে হাসেন লতা। বলেন, ‘‘লড়াই তো করছি। সে লড়াইয়ের কথাই কারও কারও সঙ্গে ভাগ করে নিও। আমি চাই, প্রত্যেকটি মেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক।’’
কোচবিহার শহর থেকে বারো কিমি দূরে, ঘেঘিরঘাটে লতা সরকারের বাড়ি। তাঁর স্বামী স্বপন সরকার কৃষিকাজ করেন। তাঁদের এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক দেবে, ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ২০০৪-এ স্বপনের সঙ্গে বিয়ে হয় লতার। সংসার সামলানো, রান্না, পরিবারের সদস্যদের দেখভাল করেই চলছিল তাঁর। জন্মের পরে, দ্বিতীয় সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতাল, এক ডাক্তার থেকে আর এক ডাক্তার করতে করতে অনেকটা খরচ হয়ে যায়। ছেলে সুস্থ হয়ে ওঠে। সংসার চালাতে হিমসিম অবস্থা হয় স্বপনের। অবস্থা বুঝতে পেরে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন লতা। বাড়িতে ফুলের বাগান ছিল। সে বাগানের ফুল দিয়ে তাঁর ব্যবসার হাতেখড়ি।
লতা জানান, পাঁচ বিঘা জমির মধ্যে বেশির ভাগ অংশে ধান ও ভুট্টা চাষ করেছেন তাঁরা। আর একটি অংশে ফুলের বাগান। বেশিরভাগ গাঁদা. তার দায়িত্ব লতার। ফুল অবশ্য প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। তাই পাইকারি বাজার থেকে প্রতিদিন ফুল কিনতে হয় তাঁকে। নদিয়ার রানাঘাট থেকে কোচবিহারে ফুল আসে। ব্যাংচাতড়া রোড, রেলগুমটি বাজারের কাছে ছোট্ট দোকান তাঁর। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭ টায় দোকানে পৌঁছন লতা। সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দোকান করেন। এর পরে, বাড়ি ফিরে সংসারের কাজ।
আয় কেমন হয়? হাসিমুখে লতা বলেন, ‘‘ডালভাতের পয়সা এসে যায়।’’ মাঝেমধ্যে ভবানীগঞ্জ বাজারের রাস্তাতেও ফুলের পসরা নিয়ে বসেন। তাঁর দোকানে ফুল কিনতে গিয়েছিলেন কলেজ পড়ুয়া রূপা রায়। রূপাকেও লতা দিয়েছেন ‘স্বাবলম্বী’ হওয়ার পাঠ। রূপা বলেন, ‘‘লতা দিদি নিজে কিছু করার চেষ্টা করছেন। ওঁর কথা শুনে অনুপ্রাণিত হই।’’ কোচবিহার জেলা পরিষদের কর্মাধক্ষ সুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, ‘‘এক জন মহিলার স্বনির্ভর হয়ে ওঠার চেষ্টাই উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। আমরা লতাকে স্যালুট করি।’’