কাঠ পাচার, বন্যপ্রাণীর হামলা রুখতে নেই নজরদারি, অভিযোগ

দিনের আলো নিভতে না নিভতেই সাইকেলে কাঠ বেঁধে পাচার শুরু হওয়ার অভিযোগ রয়েছে ডুয়ার্সে। চা বাগানের ভেতরের অলিগলি ঘুরে সন্ধের পরই শহর বা বাজার এলাকায় হাতবদল হয়ে যায় অবৈধ চোরাই কাঠ। কাঠ পাচারকারীরা ব্যাপক সক্রিয় হয়ে উঠলেও নজরদারদের হদিশ মিলছে না বলেই অভিযোগ বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলোর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালবাজার শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৪:০৯
Share:

বন্যপ্রাণ এবং মানুষের সংঘাত রোধে বন দফতরের নজরদারির অভাব স্পষ্ট বলেও অভিযোগ তাদের।

Advertisement

ডুয়ার্সের গ্রাম এবং বনবস্তিতে একের পর এক হাতি বা চিতাবাঘের হামলা হয়ে চললেও তা প্রতিরোধে টহলদারি বাহিনীর কোনও সদর্থক ভূমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ আক্রান্ত গ্রামবাসীদের। বন্যপ্রাণিরা অনেক সময়েই লোকালয়ে চলে এসে আটকে পড়লেও বনকর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই অনেক দেরি হয়ে যায় বলেও অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। শহর এলাকায় গোখরোর মতো বিষধর সাপ বাড়িতে ঢুকে পড়লে বনকর্মীদের ফোন করলে তাঁরা আসতে পারবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন। এমন অভিযোগও ভুরি ভুরি জমেছে বন দফতরের বিরুদ্ধে।

অবৈধ কাঠ চুরি রোখা বা বন্যপ্রাণিদের গতিবিধির ওপর নজরদারি চালানো, উভয় ক্ষেত্রেই ডুয়ার্সে বন দফতরের গাফিলতির অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই মেনে নিচ্ছেন নিচু তলার বনকর্মীরাও। পুরনো জং ধরা ছড়রা বন্দুক আর বিকট গোঙানির মতো শব্দ করা পুরনো জিপগাড়ি দিয়ে যে বর্তমানে কাঠ চোরদের ধরা সম্ভব নয়, তা ঘনিষ্ঠ মহলের আলোচনাতে জানানোও তাঁরা। এর ওপর অপর্যাপ্ত কর্মী, গাড়ির অভাবের মতো সমস্যা তো রয়েছেই। তবে, এই সমস্যার মাঝখানে পরিবেশের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে বলেই জানাচ্ছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি।

Advertisement

ডুয়ার্সের পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাসের কর্মকর্তা নাফসার আলির কথায়, ‘‘বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগে কাঠ চুরি ঠেকাতে মোবাইল পেট্রল রেঞ্জ রয়েছে। কর্মীরা সেখানে স্থায়ী ভাবে থাকলেও গাড়ির ভাড়ার অভাবে নাকি তাঁদের নিয়মিত টহল দিতে সমস্যা হয়। মোবাইল পেট্রল কর্মীরা যদি স্থবির হয়ে বসে থাকেন তা হলে তো কাঠ চোরেরা অতি সক্রিয় হয়ে উঠবেই।’’ ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ির পরিবেশপ্রেমী সংগঠন নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চারের সম্পাদক সুজিত দাসের কথাতেও বনদফতরের নজরদারি নিয়ে ক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ-বন্যপ্রাণ সংঘাত রোধে যে তৎপরতা বনকর্মীদের নেওয়া উচিত, তা আদৌ তাঁরা নেন না। বনকর্মীদের চোখের সামনেই হাতির দল বা খাঁচাবন্দী চিতাবাঘের ওপর উন্মত্ত গ্রামবাসীরা হামলা চালালে ওঁদের রোখার ক্ষমতাও বনকর্মীরা দেখাতে ভুলে যান।’’

ডায়নার জঙ্গল থেকে ডায়না নদী টপকে প্রতি রাতেই হাতির দল আংরাভাষা ১ এবং ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ে ফসল, বাড়ি নষ্ট করলেও বনকর্মীরা তা রুখতে একেবারেই ব্যর্থ বলে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ। আংরাভাষা এলাকার বাসিন্দা পৃথ্বীরাজ ছেত্রীর কথায়, ‘‘বনকর্মীরা হাতির হানা ঠেকাতে একেবারেই ব্যর্থ। রাত হলে বনকর্মীরা কখন আসবেন সে আশা ছেড়ে নিজেরাই একজোট হয়ে হাতিদের মোকাবিলা করার চেষ্টা করি।’’

সমস্যা যে আছে তা মেনেছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনও। তবে দ্রুতই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বন দফতরে যে সমস্যা রয়েছে সেটা বহু পুরনো। আমরা সমস্যার সমাধানে কাজ করে চলেছি। এক বারে না হলেও ধীরে ধীরে অনেকটাই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। গাড়ির অভাব মেটানোর জন্য একলপ্তে অনেকগুলি গাড়ি কেনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আচমকা সামনে কাঠপাচারকারী পরে গেলে অবৈধ কাঠ বাজেয়াপ্ত করে আনতে যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্যে গাড়ির পেছনে অনেকটা বাড়তি জায়গার ব্যবস্থাও নতুন গাড়িতে থাকবে।’’ বন্যপ্রাণ বিভাগের উত্তরমণ্ডলের বনপাল তাপস দাস অবশ্য কর্মী সংখ্যা কম হলেও বনকর্মীরা প্রবল উৎসাহেই নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি বিভাগের ৩০টিরও বেশি রেঞ্জে বন এবং বন্যপ্রাণ সংঘাত সব থেকে বেশি। বন্যপ্রাণ এবং লোকবসতি দুটোই বেড়ে যাওয়ায় সমস্যা বাড়ছেই। তার মধ্যেও বনকর্মীরা দায়িত্ব নিয়েই কাজ করছেন বলে তাঁর পাল্টা দাবি। বনবিভাগের মুখ্য বনপাল পপ শেরিং ভুটিয়াও টহলদারির অভাব স্বীকার করেননি। বৈকুন্ঠপুর ডিভিশনেও কোনও নজরদারির সমস্যা নেই বলেই জানান তিনি। গাড়ি ভাড়া করে যেখানে কাজ করা হয় সেখানে আর্থিক বরাদ্দ পৌঁছতে মাঝখানে অল্প সমস্যা হলে সেটিও মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement