—ফাইল চিত্র।
মন্ত্রিত্ব ছিল। পুরপ্রধানের পদও ছিল। কিন্তু এখন কোনওটাই নেই। বছর দেড়েক আগে জেলা পরিষদের মেন্টর করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তাও কেড়ে নেওয়া হয়। দলেও ছিলেন কার্যত কোণঠাসা। দলের কোনও দায়িত্বে না থাকায় মালদহ তথা ইংরেজবাজার শহরে কার্যত মুষড়ে ছিল তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও তাঁর শিবির। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে তাঁর শিবিরের অনেকেই বিজেপির দিকেও ঝুঁকছিলেন। আবার কৃষ্ণেন্দু দলে এলে তাঁকে স্বাগত জানানোর কথা বলে কিছু দিন আগে বিতর্ক উসকে দেন কংগ্রেসের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। এই দোলাচলের মাঝে বুধবার পুরাতন মালদহের দলীয় কর্মিসভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক দায়িত্ব কৃষ্ণেন্দুকে দেওয়ায় ফের চাঙ্গা কৃষ্ণেন্দু-শিবির। খোসমেজাজে কৃষ্ণেন্দুও। বৃহস্পতিবার গাজলে পুলিশ-প্রশাসন আয়োজিত গণবিবাহ অনুষ্ঠানে তাঁকে দলের অন্যদের সঙ্গে পুরনো মেজাজেই দেখা যায়।
জানা গিয়েছে, বুধবার রাত থেকেই তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভিড় বাড়তে শুরু করে অনুগামীদের। কৃষ্ণেন্দু-ঘনিষ্ঠ এক কর্মী বলেন, ‘‘দল অবশেষে এটা বুঝতে পারল যে পুরভোটে কৃষ্ণেন্দুকে ছাড়া জয় সহজ নয়। সে কারণেই হয়তো তাঁর গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হল। এতে আমরা উজ্জীবিত।’’ কৃষ্ণেন্দু-ঘনিষ্ঠ এক কাউন্সিলর বলেন, ‘‘কৃষ্ণেন্দুর গুরুত্ব অবশেষে দল বুঝতে পারায় আমরা খুশি।’’ কৃষ্ণেন্দু অবশ্য বলছেন, ‘‘দলনেত্রী যে নির্দেশ ও দায়িত্ব দিয়েছেন তা আমি সর্বতো ভাবে পালনের চেষ্টা করব।’’
এক সময় মালদহ জেলা তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ। পরে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ইংরেজবাজারের বিধায়ক হন। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে তিনি ফের তৃণমূলে যোগ দেন। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়ে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী হন তিনি। এ ছাড়া ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান পদে ছিলেন। পরে তাঁকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয় খাদ্য ও প্রক্রিয়াকরণ দফতরের। সেই সময় জেলার আর এক মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব শিরোনামে চলে আসে। সেই দ্বন্দ্ব মেটাতে শেষ পর্যন্ত দলনেত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ দিকে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নীহাররঞ্জন ঘোষের কাছে হেরে যান কৃষ্ণেন্দু। সেই থেকেই নীহারের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব শুরু।
এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নীহার তৃণমূলের অ্যাসোসিয়েট সদস্য হন এবং দল কৃষ্ণেন্দুকে সরিয়ে নীহারকে পুরপ্রধান পদে বসায়। তার পরে দু’জনের দ্বন্দ্ব আরও চরমে ওঠে। বিশেষ করে পুরসভা পরিচালনা নিয়ে তাঁদের দ্বন্দ্ব এখন বহুলচর্চিত বিষয়। এ দিকে বছর দেড়েক আগে কৃষ্ণেন্দুকে মালদহ জেলা পরিষদের মেন্টর পদে বসিয়েছিল দল। কিন্তু কয়েক মাস পরে সেই পদ থেকেও ইস্তফা দিতে হয় তাঁকে। দলেও তিনি ছিলেন কার্যত ব্যাকফুটে। এ হেন পরিস্থিতিতে কৃষ্ণেন্দুর শিবির কার্যত গুটিয়ে যায় বলে খবর। সূত্রে খবর, কৃষ্ণেন্দুর অনুগামীদের কেউ কেউ এই পরিস্থিতিতে বিজেপির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছিলেন। আবার কয়েক দিন আগে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে এসে কংগ্রেসের সাংসদ ডালু কৃষ্ণেন্দুকে দলে এলে স্বাগত জানানোর কথা বলে বিতর্ক উসকে দেন।
এই পরিস্থিতিতে বুধবার দলীয় সভায় কৃষ্ণেন্দুকে একাধিক দায়িত্ব দেন দলনেত্রী। আসন্ন পুরভোটের জন্য ইংরেজবাজার শহরের ১০টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে হবিবপুর ও গাজল বিধানসভা আসনের দায়িত্ব দেন নেত্রী। এই ঘোষণা করার আগে সভামঞ্চে কৃষ্ণেন্দুকে ডেকে বেশ কিছু ক্ষণ কথাও বলেন। দলনেত্রী নতুন করে দায়িত্ব দেওয়ার পরেই ফের চাঙ্গা কৃষ্ণেন্দু-শিবির।