চালু হয়েও ফের বন্ধ হয়ে গিয়েছে কোচবিহার-কলকাতা বিমান পরিষেবা। একমাস ধরে ওই উড়ান পরিষেবা বন্ধ হয়ে রয়েছে। চালু হয়েও ফের বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, কবে ওই পরিষেবা ফের নিয়মিতভাবে চালু হবে সে ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তাই নিয়মিত পরিষেবা চালু নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটছে না।
বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বিমান পরিষেবা বন্ধ নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, নির্বাচনের মুখে চমক দিতে তড়িঘড়ি পরিষেবা চালু করা হয়। কোনও পরিকল্পনা করা হয়নি। তার জেরেই সমস্যা হয়েছে। শাসক দলের নেতারা অবশ্য তা মানতে রাজি নন। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, বাম আমলে ওই পরিষেবা চালানোর ব্যাপারে কোন উদ্যোগই ছিল না। তৃণমূল জমানায় অন্তত পরিষেবা চালু হয়েছে। সাময়িক ভাবে সমস্যা তৈরি হলেও খুব শীঘ্রই ওই পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তাঁদের দাবি।
কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “ভোটের মুখে চমক দিতে উড়ান চালু করা হয়েছিল।” সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “পরিকাঠামো না করে শাসকদল উড়ান চালুর নামে যে বাজিমাতের চেষ্টা করেছিল তা স্পষ্ট হয়েছে।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “বাম ও তৃণমূল কেউ পরিষেবা চালুতে আন্তরিক নয় বলেই ওই পরিষেবা নিয়ে জটিলতা ছিল। এখনও তা রয়েছে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “যারা এ সব বলছেন তাঁরা কোন দিন উড়ান চালুর চেষ্টাটুকুও করেননি। বিমানের ত্রুটিজনিত কারণে সাময়িক সমস্যা হয়েছে। তা মিটলে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
তবে ‘স্বাভাবিক’ হওয়া যে খুব একটা সহজ নয় তা জানেন বাসিন্দা-ব্যবসায়ীরাও। লোকসানের বোঝা সামলে ভর্তুকি দিয়ে চালানো বিমান পরিষেবার স্থায়ীত্ব নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল। এখন সেটাই সামনে আসছে বলে অনুমান তাঁদের। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে কোচবিহার বিমানবন্দর থেকে নয় আসনের উড়ান পরিষেবা চালু হয়। সপ্তাহে চারদিন উড়ান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ওই পরিষেবা মিলছিল। জানুয়ারির চতুর্থ সপ্তাহ থেকে ঘন কুয়াশার জেরে বিমান ওঠানামায় সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে বেশ কিছুদিন পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে পরিষেবা ফের শুরু হয়। সেসময় নিয়মিত পরিষেবার আশ্বাসও দেওয়া হয়। কিন্তু মার্চে ফের পরিষেবা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। এপ্রিল পড়লেও সমস্যা মেটেনি।
কিন্তু ‘সমস্যাটা’ কী? যে বিমানসংস্থা ওই উড়ান চালায় সেই স্পিরিট এয়ার লিমিটেডের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার সমরেন্দ্র রায় অবশ্য বলেন, “অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে পরিষেবা চালাচ্ছিলাম। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী বকেয়া মিলছে না।” সংস্থার আধিকারিক আল্পনা প্রসাদ জানিয়েছেন, দু’মাসের টাকা বকেয়া রয়েছে। বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মহলের একাংশ অবশ্য ওই বক্তব্যে খুশি নয়। কোচবিহার ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের সম্পাদক রাজেন বৈদ বলেন, “পরিষেবা চালুর সময় এ সব ভাল করে ভাবা দরকার ছিল। তাছাড়া কোনও প্রকল্পে বকেয়া পেতে খানিকটা সময় ধৈর্য ধরতে হয়।” কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুব্রত সাহা বলেন, “উড়ান বন্ধ খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।”