জীবন সিং। —ফাইল চিত্র।
দীপাবলি ও কালীপুজোর মুখে জীবন সিংহের বিরোধী কেএলও-র কেএন গোষ্ঠীর হুমকিকে হাল্কা করে দেখছে না প্রশাসন। যদিও পুলিশকর্তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, যে কোনও উৎসবের মুখে উত্তরে এ ধরনের হুমকি আসেই। তবু এক দিকে মিজোরামে ভোট, অন্য দিকে, দীপাবলি ও কালীপুজো— এগুলিকে মাথায় রেখে সতর্কতামূলক সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তরফে বাংলাদেশ, নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকা তো বটেই, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে।
রবিবারই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে বোমা বিস্ফোরণের হুমকি দেয় শান্তি আলোচনা-বিরোধী কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজ়েশন (কামতাপুর ন্যাশনালিস্ট) বা কেএলও (কেএন) গোষ্ঠী। এ দিন সাতসকালে সংগঠনের মুখ্য আহ্বায়ক দাওসার লাংহাম কোচ বা ডিএল কোচ লিখিত বিবৃতি দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থারগুলির পক্ষ থেকে খোঁজখবরের পর জানানো হচ্ছে, বাংলাদেশ-ত্রিপুরা লাগোয়া এলাকা থেকেই ওই হুমকি বিবৃতি পাঠানো হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত পশ্চিম কামতাপুর বা উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়িক সংগঠনগুলির উপর হামলা চালানো হবে। তাদের বক্তব্য, যে সব ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়িক সংগঠনকে তাদের আর্থিক এবং নৈতিক ভাবে সমর্থন করে না, তাদের উপরেই হামলা হবে। পাশাপাশি, প্রাক্তন কেএলও’র কেউ বাধা হলে তাঁর বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে কেএলও (কেএন) সংগঠনের উত্তরবঙ্গে কাজকর্ম সামনে আসে। আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রামের এক সোনার ব্যবসায়ীকে ১০ লক্ষ টাকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরে কোচবিহার জেলার বক্সিরহাটে আরও দুই ব্যবসায়ীর কাছে ১০ লক্ষ টাকা করে দাবি করে চিঠি পাঠানো হয়। থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। এর পরে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এলাকার ওই সংগঠনের কিছু লিঙ্কম্যানের খোঁজ পুলিশ পেয়েছে। সেগুলি সবই খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। কয়েকজনের উপর নজরদারিও শুরু হয়েছে।
এ দিনের বিবৃতিতে ডিএন কোচ জানান, নমনি অসমের বিভিন্ন এলাকার সাম্প্রতিক কালে সংগঠন হামলা চালিয়েছে। তার পরে সেখানে বিভিন্ন স্তর থেকে তাঁরা সহযোগিতা পাচ্ছেন। সেখানে উত্তরবঙ্গে সংগঠন সমর্থন পাচ্ছে না বলেই হামলার পরিকল্পনা।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত জানুয়ারিতে শান্তি আলোচনার কথা বলে কেএলও প্রধান জীবন সিংহ মায়ানমার থেকে অসমে এসেছেন। তাঁর সঙ্গে দু’দফায় ১৮ জনের মতো সদস্য এসেছেন। কেন্দ্র ও অসম রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা নিয়ে সংগঠনে মতবিরোধ চরমে ওঠে। অসমের বাসিন্দা তথা অবিভক্ত কেএলও-র সহকারি প্রচার সচিব ডিএল কোচ জীবনের বিরোধিতা করে নতুন সংগঠনের ঘোষণা করেন। এরাও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় আত্মগোপন করে সংগঠন মজবুত করতে টাকা তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের অনুমান।