—প্রতীকী চিত্র।
বিরোধীদের পাশাপাশি নেই শাসক দলেরও পতাকা, ফেস্টুন কিংবা দেওয়াল লিখন। চায়ের ঠেকে ভোট নিয়ে ঠোকাঠুকি নেই। তবু আস্ত একটি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির দুটি আসনেই বিনা ভোটে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এ বারই নয়, বাম জমানা থেকে পঞ্চায়েত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় কার্যত ‘ট্র্যাডিশন’ হয়ে উঠেছে মালদহের কালিয়াচকের মোজমপুরে।
বিনা ভোটে জয় শাসক দলের,অথচ, ভোট-মরসুমে এলাকা নিরুত্তাপ কেন? ‘‘শুধু ভোট নয়, সারা বছরই সন্ত্রাসের চোরা স্রোত বয়ে মোজমপুরে’’, বললেন যিনি, তিনি ষাটোর্ধ্ব। তাঁর এবং তাঁর মতো এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, “বাম জমানাতেও মোজমপুরের যিনি নেতা ছিলেন, তৃণমূলের আমলেও। জমানা বদল হলেও, নেতা একই থেকে যাওয়ায় স্রোতটা থেকেই গিয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রের দাবি, সে নেতা হলেন আসাদুল্লা বিশ্বাস। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তাঁকে নজরবন্দি করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে, কালিয়াচকের থানা পোড়ানোর মামলায় গ্রেফতার হন। জামিন পেলেও, আদালতের নির্দেশ মতো এখনও মালদহে ঢুকতে পারেন না তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, ‘‘দাদা (আসাদুল্লা) আসতে না পারলেও, এখনও তাঁর ইশারা ছাড়া, মোজমপুরে একটা পাতাও নড়ে না। ফোন করা হলে ধরেননি আসাদুল্লা। জবাব মেলেনি মেসেজের।
শুধু মোজমপুরই নয়, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে শোনা গিয়েছে, ‘সন্ত্রাসের চোরা স্রোত’ বইছে কালিয়াচকের নওদা যদুপুর, সুজাপুর, মানিকচকের গোপালপুর, রতুয়ার চাঁদমনি, বাহারাল, হরিশ্চন্দ্রপুর, বামনগোলার মদনাবতীর মতো একাধিক পঞ্চায়েতে। ইতিমধ্যে, সুজাপুরে তৃণমূলের এক নেতা নিহত হয়েছেন, দাবি নেতৃত্বের। এ ছাড়া, কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজেপির সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের সংঘর্ষে একাধিক গ্রাম উত্তপ্ত হয়েছে। এরই মধ্যে, পুলিশ-প্রশাসনের উদ্বেগ বাড়িয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা উদ্ধারেও ঘটনা। কেন গ্রামগুলি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে? গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, রাজ্যে পালা বদলের পরে, গ্রামগুলিতে একচেটিয়া ভাবে তৃণমূলের দাপট ছিল। এ বার তৃণমূল ভেঙে অনেকে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সে সব এলাকায় শাসক-বিরোধী প্রায় সমান সমান হওয়ায়, গ্রামগুলি তাততে শুরু করেছে। ভৌগোলিক অবস্থানও জেলাকে ‘স্পর্শকাতর’ করে তুলেছে, দাবি পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের। তাঁদের দাবি, বাংলাদেশ সীমান্তের মতো মালদহের সঙ্গে বিহার, ঝাড়খণ্ডের সীমানাও রয়েছে। সে পথ দিয়ে জেলায় অস্ত্র ঢুকছে। এক পুলিশ কর্তা জানান, জেলায় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে একাধিক বার বিহার,ঝাড়খণ্ডের যোগ মিলেছে। মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।” মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “জেলায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নাকা চেকিংও শুরু হয়েছে।”
কোন বুথ ‘স্পর্শকাতর’ তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলছে। উত্তর মালদহের বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মুর দাবি, “তৃণমূলের মদত থাকায় দুষ্কৃতীদের ধরপাকড়ে নিষ্ক্রিয় পুলিশ। সে সুযোগ নিয়ে গ্রামগুলিতে তৃণমূলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীরা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের মন্তব্য, “বাম আমলে জেলায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কখনও ছিল না। তৃণমূল নিজেদের স্বার্থে দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে।” তাঁর সুরেই সুর মিলেয়েছেন কংগ্রেস নেতা ইশা খান চৌধুরী। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসের সংস্কৃতি তৃণমূলই জেলায় শুরু করেছে।” সব অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, “বিরোধীদের সংগঠন নেই। তাই সন্ত্রাসের কথা বলে, এখন থেকেই ভোটের হারের অজুহাত দিচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় বাহিনী জেলায় রুট-মার্চ শুরু হয়েছে। তাতে ‘সন্ত্রাসের চোরা স্রোত’ কতটা রোধ হবে, সে প্রশ্নই এখন লাখ টাকার।