প্রতীকী ছবি।
জন্ডিসে আক্রান্ত এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে বিতর্কে কেন্দ্রে রাজগঞ্জের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র৷ অভিযোগ, দিন সাতেক আগে চিকিৎসার জন্য ওই যুবককে মালিভিটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে, ওষুধ দেওয়ার বদলে সেখানকার কোনও এক কর্মী তাকে ঝাড়ফুঁক করার পরামর্শ দেন৷ যদিও অভিযোগ মানতে চাননি জলপাইগুড়ি জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই ব্যক্তির নাম সেনু মাহালী (৩৫)৷ রাজগঞ্জের শিকারপুর চা বাগানের ডিপো লাইনে তার বাড়ি৷ সেনুর বাবা ওই বাগানেরই কর্মী৷ তবে সেনু নিজে অবশ্য অন্য একটি ছোট চা বাগানে কাজ করতেন৷
সেনুর ভাই রন্টু মাহালির অভিযোগ, সপ্তাহ খানেক আগে জন্ডিসে আক্রান্ত হন সেনু৷ সেই সময় নিজেই স্থানীয় মালিভিটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান৷ বাড়ি এসে জানান, ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক কর্মী তাকে আগে ঝাড়ফুঁক করে জন্ডিস সারানোর পরামর্শ দেন৷ তারপর তারা ওষুধ দেবেন বলে জানান৷
রন্টু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওই কর্মীর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ভাইকে প্রথমে এক ওঝার কাছে নিয়ে যাই৷ কাজ না হওয়ায় আরও এক ওঝার কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়৷ মঙ্গলবার ভাইয়ের শরীর খুব খারাপ হলে তাকে বড়বাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই৷’’ তিনি জানান, সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন৷ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরই তার মৃত্যু হয়৷
এই ঘটনা জানাজানি হতেই সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে তাই প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের পরিজনরা৷ তাঁদের ক্ষোভ, খোদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী যদি এমন ভুল পরামর্শ দেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কাদের ভরসা করবে। সেনুর শ্যালক বিষ্ণু মুন্ডা বলেন, ‘‘সেনু সপ্তাহখানেক আগে মালিভিটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়েছিল৷ কিন্তু সরকারি ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কেন তাকে ওষুধ না দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে বলা হল সেটাই বুঝতে পারছি না৷’’ তবে সেনুর বাড়ির লোকেদের তরফে অবশ্য এখনও কোথাও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি৷
তবে সেনুর বাড়ির লোকেদের এই অভিযোগ মানতে চাননি মালিভিটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকরা৷ ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক সৌরভ ঘোষ বলেন,‘‘সম্পুর্ণ মিথ্যা অভিযোগ৷ আমাদের এখানে রোগী এলেই তার চিকিৎসা করা হয়৷ রোগীকে ঝাড়ফুঁক করার পরামর্শ দেওয়ার মত কোনও কর্মীও এখানে নেই৷’’ জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকারও বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে৷ প্রত্যন্ত এলাকায় কারও কোনও রোগ হলে সে যাতে ওঝা বা গুনিনের কাছে না যায় সে ব্যাপারে সজাগ থাকেন স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ সেখানে খোদ স্বাস্থ্য দফতরের কোনও কর্মী এমন নিদান দেবেন তা হতে পারেনা৷’’ তবে তথ্য প্রমাণ-সহ অভিযোগ জমা করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিএমওএইচ৷