আশ্বাস: সাবের আলির বাড়িতে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র
এনআরসির আতঙ্কে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করল তাঁর পরিবার।
জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সর্দার পাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। মৃত যুবকের নাম সাবের আলি (৩২)। কৃষিকাজ ও চা বাগানের পাতা তোলার কাজ করতেন সাবের। তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন বলেও দাবি পরিবারের।
এনআরসির আতঙ্কেই এই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। কয়েক দিন ধরেই গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। কারও ভোটার কার্ডে নামের বানান ভুল আছে। কারও আবার আধার কার্ড নেই। তাঁদের ভয়, সেই ভুলই না কালান্তক হয়ে ওঠে। এনআরসির সময় সেই ভুলের জন্যই না তাঁদের নাগরিকত্ব বাদ দিয়ে দেওয়া হয়!
সাবেরের স্ত্রী আফেরউন্নেসা জানান, দুই মেয়ে আছে তাঁদের। এনআরসির আতঙ্ক যেন বেশ কিছু দিন থেকেই পেয়ে বসেছিল সাবেরকে। চার ও সাত বছরের কন্যা সন্তানের আধার কার্ডে নামের বানানও ভুল ছিল বলে জানান তিনি। তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর নামের বানানও আধার কার্ডে ভুল থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন সাবের। মৃতের জ্যাঠামশায় ইয়াকত আলি বলেন, ‘‘এনআরসি আতঙ্ক সাবেরের মধ্যে ছিল। কয়েক দিন ধরে বলছিল আধার কার্ডে বানান ভুল রয়েছে ঠিক করতে পাচ্ছেন না। এই ভয়ে আত্মহত্যা করে। গরিব পরিবার কী করে সংসার চলবে জানি না।’’
বেশ কিছু দিন থেকে সাবের প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে কখনও গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরে, কখনও বিডিও অফিসে যাতায়াত করছিলেন বলে পরিবার সূত্রের খবর। কিন্তু তা ঠিক করতে সময় লাগছিল। তাতেও সাবের মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বলে দাবি পরিবারের।
এ দিন সন্ধেয় মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, গৌতম দেব, বিধায়ক খগেশ্বর রায়, এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান বিজয়চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ মৃতের বাড়িতে যান।
অরূপ বলেন, ‘‘কোনও ভাষা নেই সান্ত্বনা দেওয়ার। ছোট্ট দুই শিশুকে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তবুও বলছি আমরা আপনাদের পাশে আছি। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। এই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কখনও এনআরসি চালু করতে দেবে না।’’
পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘সর্দার পাড়ার এক যুবক মারা গিয়েছেন। পরিবারের দাবি এনআরসি আতঙ্কে মারা গিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে দেখছি। আতঙ্ক যেন না ছড়ায় সেই বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’’