হাসিমুখে: সার্কিট বেঞ্চের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার বিকেলে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে সন্ধে নাগাদ তিনি জলপাইগুড়ি পৌঁছন। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
চার দশকেরও বেশি সময়ের অপেক্ষা শেষ। প্রত্যাশা পূরণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল জলপাইগুড়ি। জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরুর উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে শুক্রবার বিকেল থেকে একে একে হাইকোর্টের বিচারপতিদের কনভয় শহরে ঢুকতে শুরু করে। রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ জলপাইগুড়ি শহরে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই, একসময়ে আন্দোলনে উত্তাল হওয়া জলপাইগুড়ি যেন দ্বিগুণ উন্মাদনায় ফুটতে শুরু করেছে।
রাত আটটা। সার্কিট বেঞ্চের আদালতের সামনে থিকথিক করছে ভিড়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশ আদালত ভবনের সামনে কাউকে দাঁডাতে দেয়নি। সন্ধ্যার পর পুলিশি কড়াকড়িও কমে যায়। হাইকোর্টের বিচারপতিদের কেউ কেউ আদালত ভবন দেখতে সার্কিট বেঞ্চের সামনে চলে আসেন। বেঞ্চ চত্বরে আমজনতার ভিড় তাঁদেরও নজর এড়ায়নি। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে জলপাইগুড়ির আবেগের কথা সকলেই জানেন। তাই অন্তত এ দিন আর কড়াকড়ি করা হয়নি।”
বিকেল থেকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে আলোর মালা জ্বলতে শুরু করে। শহরের অনেক বাড়িতেও আলোর সাজ। প্রতি মোড়ে বড় স্ক্রিনে এ দিন বিকেল থেকেই সার্কিট বেঞ্চের ছবি, খবর চলছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসিন্দারা আদালত ভবনের সামনে আসেন স্বপ্নপূরণকে একবার সচক্ষে দেখে নিতে।
উদ্বোধনের আগের দিন সকাল থেকেই জলপাইগুড়ি ছিল সরগরম। কখনও আইনমন্ত্রী ডাকবাংলো থেকে বিচারপতিদের আবাসন পরিদর্শনে যাচ্ছেন, কখনও বিচারপতিরা কনভয়ে উদ্বোধনী মঞ্চ দেখতে যাচ্ছেন। আদালত ভবনের আশেপাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযানও হয়েছে এ দিন। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার শিলিগুড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন। আজ, শনিবার সকালে তাঁর জলপাইগুড়ি আসার কথা। রাজ্যপালও শনিবার সকালে শহরে আসবেন বলে খবর।
হাইকোর্টের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়াও সারা হয়েছে শুক্রবার। কোন পথে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আসবেন, মঞ্চে কে কোথায় বসবেন— সবই একবার করে দেখে নেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৈদিক স্তোত্র গাইবেন এক শিক্ষিকা এবং তাঁর চার ছাত্রী। স্তোত্র শোনানোর মহড়াও হয়েছে এ দিন। বিচারপতিরা স্তোত্র শুনে হাততালি দেওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন কলেজ ছাত্রীরা। মহড়ার পর ছাত্রীদের ডেকে ‘নার্ভাস’ না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় যখন শহরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, তখন কোথাও দু’পাশে মোমবাতি নিয়ে বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে, কোথাও বাজছে শঙ্খ। মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে জোড় হাতে নমস্কার করেছেন জনতাকে। সার্কিট বেঞ্চ দাবি আদায় সমন্বয কমিটির সদস্য সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বেঞ্চ নিয়ে তো কম টানাপড়েন আর জটিলতা দেখিনি। এমনও হয়েছে, সব ঠিক, শেষ মুহূর্তে কোথাও আটকে গিয়েছে। আজকে যখন বিচারপতিরা, মুখ্যমন্ত্রী শহরে পৌঁছে গিয়েছেন, তখন মনে হচ্ছে, এ বার স্বপ্ন পূরণ হবে।’’ এ দিন রাত থেকে শহরবাসীর মনের কথা যেন এটাই। এই নিশ্চয়তাই আবেগকে আরও উস্কে দিয়েছে।