রকারি খাস জমির ওপর রিসর্টের সিমানা ভাঙছে প্রশাসন ও পুলিশ। মঙ্গলবার গজলডোবায়। ছবি: স্বরূপ সরকার।
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের নির্দেশে শিলিগুড়ি শহরের পাশের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এবং লাগোয়া গজলডোবা নিয়ে সরকারি জমি দখলের রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, গত ১২ জুলাই ভূমি সংস্কার দফতরের তরফে জমি দখলের রিপোর্ট জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কাছে জমা করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে, সে রিপোর্ট পৌঁছেছে ‘নবান্ন’-এ। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার একর খাসজমির হদিস মিলেছে, যার অনেকটাই দখল হয়ে গিয়েছে বলে রিপোর্টে বিশদে উল্লেখ রয়েছে। কোন জমি, কোথায়, কতটা, কে বা কারা দখল করেছে তা-ও রিপোর্টে রয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের তরফে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নতুন করে জমি দখলমুক্ত করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবারই গজলডোবা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একাধিক খাস জমিতে থাকা রিসর্ট, হোটেল এবং নির্মীয়মাণ বিনোদন পার্কের জমির দখল নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেখানে প্রাক্তন এক মেয়র পারিষদের রিসর্ট, শাসক-ঘনিষ্ঠ এক হোটেল ব্যবসায়ীর বিনোদন পার্ক ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে আজ। বহুলচর্চিত মাছের নামে একটি হোটেল, পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের জমি-সহ ২১টি জমি আলাদা করে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধাপে ধাপে সে জমিগুলি থেকে নির্মাণ, ঘর, সীমানা পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।
প্রশাসনিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গজলডোবা এলাকার প্রাথমিক তালিকায় ৩২ একর, ডাবগ্রাম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৩,৯৩৬ একর, ডাবগ্রাম ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৬৭.৫ একর, ফুলবাড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ১,৩০১ একর এবং ফুলবাড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৭৪৪ একর খাসজমির হিসাব রয়েছে। জলপাইগুড়ি প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানান, প্রাথমিক ভাবে খাসজমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ছ’হাজার একরের কাছাকাছি। আরও কিছু জমির হিসাব মিলতে পারে। বিভিন্ন মৌজা ধরে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই পরিমাণ খাসজমির মধ্যে নদীর কবলে কিছুটা গিয়েছে। কিছু দফতর এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নানা কাজে জমি দেওয়ার তথ্য রয়েছে। তার বাইরে বেশিরভাগ জমি দখল হয়েছে বলে দাবি প্রশাসন সূত্রের। রিপোর্টে উল্লেখ, অনেকে বাণিজ্যিক কাজের জন্য লিজ়ে জমি চাইলেও, তা লিজ় মেলার আগেই দখল করে নিয়েছে।
এ দিন দুপুর থেকেই আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে গজলডোবা জুড়ে পুলিশ বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে গ্রেফতারের ভয়ে কোথাও কোনও প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ হয়নি। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সy কিছুই ‘নবান্ন’-এর শীর্ষ স্তরের নির্দেশে করা হচ্ছে। সরকারি জমি দখলের একটি রিপোর্ট সমীক্ষার পরে জমা করা হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে জমির অবৈধ কারবার নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসক দলের নেতাদের সতর্ক করে দেন। তার পরেই ধরপাকড় শুরু হয়ে যায়। তৃণমূলের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির ব্লক সভাপতি ও সহসভাপতি ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। দল তাঁদের বহিষ্কার করে। শিলিগুড়ির দুই পুরপ্রতিনিধির হেফাজতে থাকা জমির সরকারি ভাবে দখল নেওয়া হয়েছে। এক জনের খামারবাড়ি ভাঙা হয়েছে। এ বার দ্বিতীয় দফায় খাস জমি দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।