নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি-র স্বাস্থ্য পরিষেবা সেল। বুধবার রাতে তাদের অবস্থান মঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং কর্মী সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছুরি, রড, বাটাম নিয়ে আট ন’জনের একটি দল রাতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। আন্দোলনকারী চিরঞ্জিত সাহা, নুর আলমরা কয়েকজন জখমও হয়েছেন বলে দাবি। বৃহস্পতিবার তা নিয়ে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করা হয়। ডেন্টাল কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।
অভিযোগ, এলাকার তৃণমূল নেতা তথা মাটিগাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হরেন্দ্রনাথ বর্মনের ছেলে, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি কৃষ্ণ সরকারের স্ত্রী, এক তৃণমূল নেতার শ্যালক-সহ তৃণমূল ঘনিষ্ঠ ১০ জনকে ‘হাউজ কিপিং’-এর কাজে সম্প্রতি ডেন্টাল কলেজে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রধান এবং অঞ্চল সভাপতি ‘দলীয় প্যাড’-এ তাঁদের ছেলে, স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন। যে ঠিকাদার সংস্থা কাজের বরাত পেয়েছে তারা ওই ১০ জনকে কাজে নিয়েছে। পক্ষপাতিত্ত্ব করে বেছে বেছে শাসক দলের লোকদের কাজে নিয়োগ করার অভিযোগ তুলে কয়েক দিন ধরেই আন্দোলনে নামে বিজেপি।
সুপারিশ করে দলীয় কাগজে নাম দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন হরেন্দ্রনাথবাবু, কৃষ্ণবাবুরা। প্রধান বলেন, ‘‘এটা ঠিক আমার ছেলে এবং আমাদের কয়েকজন লোককে কাজের সুযোগ দেওয়ার জন্য ঠিকাদার সংস্থাকে সুপারিশ করা হয়েছিল। কাকে নিয়োগ করা হবে সেটা সংস্থার ব্যাপার। আমার ছেলে বলে কী সে কাজ করতে পারবে না? শাসক দলের বলে সে কী না খেয়ে থাকবে?’’ বিজেপি’র দাবি, প্রভাব খাটিয়ে, চাপ দিয়ে নিজেদের লোকদের সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে, প্রধানের ছেলে, নেতাদের বউরা কেউই সাফাইয়ের কাজ করবেন না। বসে থেকে পারিশ্রমিক নেবেন।
প্রধানের দাবি, প্রভাব খাটানোর ব্যাপার নেই। কাজ করলে তাঁরা বেতন পাবেন। কাজ না-করলে ঠিকাদারই তাঁদের রাখবেন না। কৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘প্রধান ঠিকই বলেছেন। ঠিকাদারকে সুপারিশ করা হয়েছিল মাত্র।’’ হামলার অভিযোগ মিথ্যে বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর কথায়, বুধবার ঝড় জলে বিজেপি’র মঞ্চ নষ্ট হয়েছে বলেই শুনেছেন। ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সৌমেন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ঠিকাদার কাকে রাখছেন, সেটা আমাদের দেখার কথা নয়। কাজ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, আমরা দেখব। কাজের মান পর্যালোচনা করে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। প্রতি বছর সে সব খতিয়ে দেখেই বরাত নবীকরণ হবে।’’
ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাসে টেন্ডার করে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ জন হাউজ কিপিংয়ের কাজে যোগ দেয়। একাংশ পুরনো লোক। বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার মালিকপক্ষের অন্যতম নারায়ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের চিঠি দিয়ে কিছু লোককে নেওয়ার কথা প্রধানরা জানিয়েছিলেন। তবে চাপ দেওয়ার ব্যাপার নেই।’’