১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে এক মাস ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘুরপাক খাচ্ছেন বেসরকারি গাড়ির চালক হিতেন সরকার। ‘প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট’ দরকার। তা পেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারবেন ছেলেকে। কিন্তু, স্থায়ী মনোবিদ না থাকায় ‘আই কিউ’ পরীক্ষা বন্ধ। তাই দিনের পর দিন ‘প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট’ এর জন্য ঘুরে হয়রান হচ্ছেন হিতেনের মতো অন্তত শতাধিক অভিভাবক। সব জেনেও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন দ্রুত মনোবিদ নিয়োগের জন্য উদ্যোগী হচ্ছেন না, সেই প্রশ্নে ক্ষোভ জমছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান নির্মল বেরাও সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘দ্রুত স্থায়ী মনোবিদ নিয়োগ করতে হবে। সে জন্য বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখেছি। কিন্তু, কবে তা হবে জানি না। মনোবিদ না থাকলে আই কিউ টেস্ট করানো মুশকিল। সে জন্যই আবেদনকারী অভিভাবকদের দুর্ভোগ হচ্ছে।’’
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, এতদিন জেলার মানসিক রোগ বিষয়ক প্রকল্পের আওতায় থাকা একজন মনোবিদকে দিয়ে ওই পরীক্ষা করানো হচ্ছিল। সম্প্রতি প্রকল্পের কাজে বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকেন তিনি। সে জন্য মেডিক্যাল কলেজে নিয়মিত বসতে পারছেন না ওই মনোবিদ। তাই হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকজন অভিভাবক বিভিন্ন নেতা বা স্বাস্থ্যকর্তাদের ধরাধরি করে কেউ রায়গঞ্জে, কেউ জলপাইগুড়িতে গিয়ে জেলা হাসপাতালে মনোবিদদের মাধ্যমে ‘আই কিউ’ টেস্ট করিয়েছেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে মিলেছে মানসিক ভাবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নের শংসাপত্র। লেক টাউন, আশ্রমপাড়া, ভক্তিনগর এলাকার অন্তত ৩০ জন বাসিন্দা রোজই মেডিক্যালে গিয়ে মনোবিদ কবে আসবেন সেই খবরাখবর নেন। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরে যদি মানসিক রোগ বিষয়ক প্রকল্পে মনোবিদ থাকতে পারে তা হলে দার্জিলিং জেলায় কেন নেই?
দার্জিলিঙের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য জানান, জেলায় মানসিক রোগ বিষয়ক প্রকল্পের কাজ চালুর প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই তা চালু হবে বলে তাঁর আশা।
তবে আরও কতদিন হিতেনবাবুর মতো অভিভাবকদের মেডিক্যাল কলেজে ছোটাছুটি করতে হবে, স্বাস্থ্য দফতরের কেউই তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেনি।