বিশ্ব জুড়ে উষ্ণায়ন বাড়তে থাকা পরিস্থিতিতে ‘গ্রিন টুরিজ়ম’-কে জনপ্রিয় করে তোলার প্রক্রিয়া এই সম্মেলনের আলোচনায় তুলে ধরা হবে। ফাইল ছবি।
দার্জিলিং জেলায় আসন্ন জি২০ সম্মেলনের পর্যটন সম্পর্কিত আলোচনায় অন্যতম বিষয়বস্তু হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে ‘গ্রিন টুরিজ়ম’। সরকারি সূত্রের খবর, এর বাইরে আরও একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও আলোচ্যসূচির প্রথমেই রাখা হয়েছে ‘পরিবেশবান্ধব পর্যটন’ বা ‘গ্রিন টুরিজ়ম’-কে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় পর্যটন সচিব অরবিন্দ সিংহের এক ভিডিয়ো-বার্তা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে শিলিগুড়ির সম্মেলনকে ঘিরে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের আগমন এবং ‘গ্রিন টুরিজ়ম’-এর মতো বিষয়বস্তুগুলিকে তুলে ধরা হয়েছে। পরিবেশ, প্রকৃতিকে স্বাভাবিক রেখে জল সংরক্ষণ, সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বা বৃষ্টির জল ধরে রেখে ব্যবহার করে নানা পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে।
মন্ত্রকের অফিসারেরা জানান, ‘গ্রিন টুরিজ়ম’ মানে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বা পরিষেবা আধুনিক থাকবে না, তা নয়। একেবারে প্রকৃতির মাঝে প্রাকৃতিক সম্পদকে বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা নানা ধরনের জনপ্রিয় কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। পাহাড়, জঙ্গল এবং সমুদ্রকে ঘিরে অসাধারণ প্রকল্প সামনে আসছে। সেখানে স্থানীয় ভাবে চাষ করা আনাজ, ফলমূলের খাবার পর্যটকেরা খাচ্ছেন। একেবারে জমজমাট পর্যটন কেন্দ্রের বদলে স্থানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস বা হস্তশিল্পকে ঘিরে থাকা গ্রামগুলিতে ঘুরছেন। তা-ই ‘গ্রিন টুরিজ়ম’।
বিশ্ব জুড়ে উষ্ণায়ন বাড়তে থাকা পরিস্থিতিতে ‘গ্রিন টুরিজ়ম’ বা ‘ইকো টুরিজ়ম’-কে জনপ্রিয় করে তোলার প্রক্রিয়া এই সম্মেলনের আলোচনা থেকে তুলে ধরা হবে। কেন্দ্রীয় পর্যটন সচিব বলেছেন, ‘‘শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনায় বাছাই করা পাঁচটি ক্ষেত্রের মধ্যে গ্রিন টুরিজ়ম, ডিজিটাল টুরিজ়ম, স্কিলস, এমএসএমই টুরিজ়ম, এবং ডেস্টিনেশন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আলোচনা হবে। পর্যটন নিয়ে গুজরাতের রণ অব কচ্ছের জি২০ সম্মেলনের আলোচিত বিষয়গুলি আমরা শিলিগুড়ির বৈঠক থেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।’’
পর্যটন মন্ত্রক সূত্রের খবর, ‘গ্রিন টুরিজ়ম’ সারা বিশ্বে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। দেশের মধ্যে কেরল, হিমাচলে নতুন করে ‘গ্রিন টুরিজ়ম’-কে ভিত্তি করে প্রকল্প সামনে আসছে। সান্দাকফুর টংলুতে রাজ্য পর্যটন দফতর প্রথম বার পর্যটক, ট্রেকারদের থাকার জন্য রিসর্ট তৈরি করছে। সেখানেও ‘ইকো টুরিজ়ম’ বা ‘গ্রিন টুরিজ়ম’-কে মাথায় রেখেই নকশা ও পরিকল্পনা করা হয়েছে। দেশের থেকে বিদেশিরা বেশি এ ধরনের রিসর্টে থাকতে পছন্দ করছেন। রাজ্যের বন দফতরের ডুয়ার্সের গাছবাড়ির মতো ট্রি হাউসও ‘গ্রিন টুরিজ়ম’-এর অন্যতম উদাহরণ। গজলডোবা মেগা টুরিজ়ম হাবেও এক সময় ‘ইকো টুরিজ়ম’-কে সামনে রেখেই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি দেশের কিছু প্রান্তে রেন ফরেস্ট ক্যানোপি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
রাজ্যের পর্যটন দফতরের এক যুগ্ম সচিবের কথায়, ‘‘বিশ্বায়নের সঙ্গে বাড়ছে উষ্ণায়ন। সেখান থেকে ক্রংক্রিটের বড় হোটেল, রিসর্টের বদলে পাহাড়ে, জঙ্গলে মোড়া গ্রিন টুরিজ়মের রিসর্ট অনেক বেশি আকর্ষণীয় সব সময়। কিন্তু এর সংখ্যা খুব কম। আবার খরচের দিক থেকে সবার নাগালের মধ্যেও থাকে না। কিন্তু ধীরে ধীরে সবাইকে এই মডেলের দিকেই এগোতে হবে। সম্মেলনে সবই আলোচনা হবে।’’