পাচারপথ: তিস্তার বালি তুলতে সার্কিট বেঞ্চের বিজ্ঞপ্তি-সহ সাইনবোর্ড। এটাকেই অজুহাত করে বালি পাচারের নালিশ উঠছে। ছবি: সন্দীপ পাল।
সার্কিট বেঞ্চের সাইনবোর্ড লাগিয়ে তিস্তার চর থেকে বালি পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ। কলকাতা হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চের ভবন তৈরির জন্য বালি তোলার বিশেষ অনুমতি দিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তার চর থেকে বালি তোলার অনুমতি নেই। একমাত্র ব্যতিক্রম সার্কিট বেঞ্চের বালি তোলার জন্য বরাদ্দ পাহারপুরের চৌধুরীহাট এলাকার চর। অভিযোগ, সেই এলাকা থেকে তোলা বালি সার্কিট বেঞ্চ ছাড়াও অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তিস্তার চরে বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে জানানো হয়েছে, ওই এলাকা থেকে হাই কোর্টের সার্কিট বেঞ্চের জন্য বালি তোলার অনুমতি রয়েছে। অনুমতির নির্দেশিকার মেমো নম্বর কত তাও লেখা রয়েছে বোর্ডে। যদিও সেখানে নজরদারি ব্যবস্থা নেই বলে দাবি। ট্রাক নামিয়ে যে বালি তোলা হচ্ছে সেই বালি কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেইটুকু জিজ্ঞেস করারও কেউ নেই বলে অভিযোগ।
জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “পূর্ত দফতর থেকে আমাদের কাছে বালি তোলার অনুমতি চেয়েছিল। হাই কোর্ট ভবনের কাজ হবে বলে প্রশাসন সেই অনুমতি দিয়েছে। তবে এলাকায় প্রশাসনের তরফে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। অবৈধ ভাবে যারা বালি তোলে তাদের জরিমানা করা থেকে ট্রাক বাজেয়াপ্তও করা হয়।”
জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরেই হাই কোর্টের স্থায়ী ভবন তৈরি হচ্ছে। যে জমিতে ভবন তৈরি হচ্ছে, সেটি অনেকটাই নিচু। ভিতের কাঠামো তৈরির কাজ শেষ। ঘর তৈরি হবে পাশের জাতীয় সড়ক যতটা উচ্চতায় রয়েছে সেই স্তর থেকে। তার জন্য প্রচুর বালি চাই। পূর্ত দফতরের সূত্রের দাবি, তিস্তার চরে যে ধরনের বালি পাওয়া যায়, সেই বালিতেই কাজ ভাল হবে। সে কারণেই জলপাইগুড়ির তিস্তার পাড় থেকে বালি তোলার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। গত এপ্রিলে জেলা প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সেই অনুমতির সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ বালি পাচার করছে বলে অভিযোগ।
এলাকায় নজরদারির কেউ নেই। ইচ্ছে মতো ট্রাক নামছে। পে লোডার দিয়ে বালি তুলে বোঝাই করে ট্রাক চলে যাচ্ছে। সেই ট্রাক আদৌও সার্কিট বেঞ্চ ভবনের কাজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিনা তা দেখারও কেউ নেই এলাকায়। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ট্রাক বালি তুলে কখনও জাতীয় সড়কের ডান দিকে, যেদিকে ভবন তৈরি হচ্ছে সেদিকে, কখনও আবার বাঁ দিকে চলে যাচ্ছে।
এলাকার দুই তৃণমূল নেতার মদতে এই ভাবে বালি তোলা চলছে বলে অভিযোগ। যদিও অভিযোগ মানতে চাননি এলাকার বিধায়ক খগেশ্বর রায়। তিনি বলেন, “তৃণমূল নেতারা কখনও অবৈধ ভাবে বালি-পাথর তোলায় যুক্ত থাকতে পারেন না। নেই ও। দলের নেতৃত্বও এ নিয়ে কড়া।”