ফাড়াবাড়ি বিট অফিস লাগোয়া দোকানে বসে সবে চা, ওমলেটের অর্ডার দিয়েছেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী সঞ্জয় সহানি ও তাঁর বন্ধু অমিত। চারটি বাইকে অন্য ছ’জন যুবক তখন হাজির হন দোকানে। ইশারা করতেই দোকানের এক কর্মী বাড়ির ভিতর থেকে ৩টি বোতল নিয়ে হাজির হলেন। বোতল নিয়ে তাঁরা চলে গেলেন দোকানে পাশে থাকা ঘরে।
বোতলে কী বিক্রি করছেন? চোলাই, হারিয়া দুই আছে। চলবে নাকি?
পাল্টা প্রশ্নে সঞ্জয়রা জানতে চান, এ ভাবে চোলাই বেচছেন ভয় করে না? দোকানদার নির্ভয়ে উত্তর দেয়, ‘‘ধুর মশাই আমরা তো এনে বিক্রি করছি। যেখানে তৈরি হচ্ছে পুলিশ আগে সেই কারখানা বন্ধ করুক।’’
শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকায় চোলাই তৈরি করে ওই ভাবেই বিভিন্ন ঠেকে বিক্রি হচ্ছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া ডাবগ্রাম ২, ডাবগ্রাম ১ ও বিন্নাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তিনটি গোপন ডেরায় চোলাই তৈরি হচ্ছে বলেই অভিযোগ।
আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই এলাকার কোথায় চোলাই তৈরি হচ্ছে, সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যৌথ অভিযান করা হচ্ছে।’’
চোলাই কারবারের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ডাবগ্রাম ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুধা সিংহ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘চোলাই তৈরি, বিক্রি সবই হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকেই আমরা অভিযোগ করছি। পুলিশ এতদিন কঠোর ব্যবস্থা নিলে হয়ত সব বন্ধ হয়ে যেত। এ বার প্রশাসনের সহযোগিতা না পেলে আমি নিজে গ্রামের মহিলাদের নিয়ে ঠেক ভাঙতে রাস্তায় নামব।’’
শুক্রবার ডাবগ্রাম ২-র পার্ট-বি তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে আশিঘর ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ জমা করে চোলাই কারবার বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি প্রিয়াঙ্কা সাহা বলেন, ‘‘ইস্টার্ন বাইপাস এলাকায় চোলাইয়ের কারবার বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিক পুলিশ।’’ চোলাইয়ের কারবার বন্ধে ইষ্টার্ন বাইপাস এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা দেওয়াল লিখন শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গোপন ডেরা থেকে চোলাই বিভিন্ন মাপের প্লস্টিকের বোতলে ভরে বাইকে করে পৌছে দেওয়া হয় বিভিন্ন ঠেকে। ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া ছোট ফাপরি, বড় ফাপরি, নেপালিবস্তি, নরেশ মোড়, ফাড়াবাড়ি, একটিয়াশাল প্রভৃতি এলাকায় চোলাই বিক্রির ঠেক রয়েছে বলেই অভিযোগ। শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) গৌরব লাল বলেন, ‘‘ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া এলাকায় চোলাই বিক্রির খবর রয়েছে। তবে ওই এলাকায় চোলাই তৈরি হচ্ছে বলে জানা নেই। আমরা
নিয়মিত তল্লাশি চালাচ্ছি। ধরপাকড়ও হচ্ছে।’’