ধৃত রাধেশ্যাম। — নিজস্ব চিত্র
বেআইনি ভাবে পোস্ত চাষ করার অভিযোগে তৃণমূলের এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার রাতে মালদহের কালিয়াচকের চৌরি অনন্তপুর এলাকার ঘটনা। গ্রেফতারির পরে শনিবার কালিয়াচকের গোলাপগঞ্জ ফাঁড়িতে বিক্ষোভ দেখায় পঞ্চায়েত সদস্যের অনুগামীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
কালিয়াচক থানার চৌরি অনন্তপুরের গোঁসাইটোলা গ্রামের বাসিন্দা ধৃত রাধেশ্যাম মণ্ডল গোঁসাইটোলা পঞ্চায়েতেরই তৃণমূল সদস্য। তাঁর বাবা লিলু বাবুর নামে জমি রয়েছে, সেই জমিতেই বেআইনি ভাবে তিনি পোস্ত চাষ করেছেন বলে অভিযোগ। শনিবার তাঁকে হেফাজতে চেয়ে আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। যদিও ধৃতের অনুগামীদের অভিযোগ, মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে রাধেশ্যামবাবুকে। অভিযুক্তের আইনজীবী সুদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার না করে নিরীহ মানুষদের গ্রেফতার করছে। এই ঘটনায় আমরা উচ্চ আদালতের দারস্থ হব।’’
এ দিকে এই ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিরোধীরা। জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নূর বলেন, ‘‘আমরা বারবার পুলিশের কাছে দাবি করেছিলাম বেআইনিভাবে পোস্ত চাষের ঘটনায় শাসক দলের নেতা কর্মীরা জড়িত।’’ গ্রেফতারের ঘটনার পরে তা প্রমাণ হচ্ছে বলে জানান তিনি। পুলিশ ভাল করে তদন্ত করলে এমন আরও অনেক নেতা গ্রেফতার হবে বলেও দাবি তাঁর। প্রায় একই সুরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রও। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতে বিঘার পর বিঘা জমিতে বেআইনিভাবে পোস্ত চাষ হয়েছে কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর জুড়ে।’’ তাঁদের দলের তরফ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে লিখিত ভাবে একাধিক বার সেই অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করলে আরও অনেকে গ্রেফতার হবে বলে আশা তাঁর। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বিরোধীদের উপর পাল্টা দায় চাপিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি জানান, জেলাতে অধিকাংশ পঞ্চায়েত সিপিএম ও কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। সেই সব এলাকায় কেন বেআইনিভাবে পোস্ত চাষ হয়েছে তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। দলের পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ পুলিশের কাজ করছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছর জেলাতে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বেআইনি ভাবে পোস্ত চাষ হয়েছে। সব থেকে বেশি হয়েছে কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর থানার বিস্তীর্ণ এলাকায়। পুলিশ ও আবগারির দফতরের তরফে বেআইনি পোস্ত চাষের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও সমস্ত জমির পোস্ত নষ্ট করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ ও আবগারি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পোস্ত চাষের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের ধরতে ভূমি সংস্কার দফতরকে সঙ্গে নেওয়া হয়। জমি ধরে মালিকদের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এখন জেলা জুড়ে চলছে ধরপাকড়।