কার্ড দিয়েছে সরকার, তা হলে ভুলের দায় কার, প্রশ্ন সানাউল্লাহর

একটি ভুল সংশোধনে কনকনে ঠান্ডায় রাতভর লাইনে দাঁড়ালেন ইংরেজবাজার ব্লকের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাবুপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ সানাউল্লাহ।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৩
Share:

প্রতীক্ষা: আধার নিয়ে লাইনে সানাউল্লাহ। ইংরেজবাজারে। নিজস্ব চিত্র

তাঁর নাম মহম্মদ সানাউল্লাহ। আধার কার্ডে তা-ই হয়েছে মহাম্মদ সানাউল্লাহ।

Advertisement

ওই একটি ভুল সংশোধনে কনকনে ঠান্ডায় রাতভর লাইনে দাঁড়ালেন ইংরেজবাজার ব্লকের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাবুপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ সানাউল্লাহ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের অতুল মার্কেট সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের আধার কেন্দ্রে কার্ডের নাম ঠিক করার পরে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেলেন তিনি।

Advertisement

তবে আশঙ্কা কাটল না পুরোপুরি। সানাউল্লাহ বলেন, ‘‘চার ছেলের মধ্যে দুই ছেলে পাঁচ মাস আগে মালয়েশিয়ায় গিয়েছে। আরও দেড় বছর পরে বাড়ি ফিরবে। ওদেরও আধার কার্ডে নাম ভুল রয়েছে। ওরা দেশে না ফেরা পর্যন্ত তা ঠিকও করা যাবে না। এতেই আশঙ্কায় রয়েছি।’’ আধার কার্ডে ভুল নিয়ে বৃদ্ধের প্রশ্ন, ‘‘সরকার থেকেই তো ওই কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। সেই সময় ঠিক মতো কাজ না হওয়ায় এখন রাত জেগে আমাদের ভুল ঠিক করাতে হচ্ছে। ভুলের দায় কী ওদেরও নয়?’’

সানাউল্লাহের মতোই ওই ব্যাঙ্কের শাখার সামনে রাতভর জেগে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের জনা পঞ্চাশেক মহিলা-পুরুষ। ব্যাঙ্কের সিঁড়িতে টাঙানো বিজ্ঞপ্তি। তাতে লেখা— ‘সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আধার কার্ডের ভুল সংশোধন করা হবে। ১৭ জনের বেশি কার্ড সংশোধন করা হবে না। সে জন্য সকাল ১০টায় ব্যাঙ্ক খোলার পরে নাম লেখাতে হবে।’

কেন এমন নিয়ম? ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘অন্য কাজও আমাদের করতে হচ্ছে। তারই ফাঁকে আধার কার্ড সংশোধনের কাজও করে দিচ্ছি।’’

১৭ জনের ওই তালিকায় নাম ওঠাতে অনেকেই তা-ই হাজির হচ্ছেন এক দিন আগেই। রাত জেগে দাঁড়াচ্ছেন লাইনে।

মোথাবাড়ির উত্তর লক্ষ্মীপুর থেকে বুধবার দুপুরেই শহরে এসেছিলেন আব্দুল খালেক। আধার কার্ডে তাঁর বাবার নাম রয়েছে সামসাদ শেখ। আর ভোটার কার্ডে সামসেদ শেখ। তিনি বলেন, ‘‘এক দিন দিনমজুরি করলে আড়াইশো টাকা মেলে। দু’দিনে ৫০০ টাকা লোকসান হল। কিন্তু কী আর করবো।’’

১৭ জনের ওই তালিকায় প্রথম নাম ছিল মানিকচকের নুরুল হকের। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার ভোরে স্ত্রীকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। সে দিন ১৮ নম্বরে নাম আসে। বাড়ি না ফিরে দু’জনে এখানেই তা-ই আরও এক দিন থেকে গেলাম। কার্ডে নাম ঠিক থাকলে অন্তত দেশ থেকে তো তাড়াবে না, সেই আশায়।”

আবার রাতভর লাইনে দাঁড়ালেও ওই তালিকায় নাম উঠেনি মনিরুদ্দিন শেখ, টুম্পা সরকারদের। তাঁরা বলে যান, ‘‘ঠান্ডার মধ্যে ভোর চারটে নাগাদ লাইনে দাঁড়িয়েও কাজ হল না। ফের সোমবার লাইনে দাঁড়াতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement