এক পরিবহণ ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল নেতার কাছ থেকে সর্বভারতীয় একটি লাইফস্টাইল চ্যানেলের শুটিং-এর কথা বলে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করল সিআইডি। গত বৃহস্পতিবার সিআইডি অফিসারদের দল ভাইজাগ থেকে অভিযুক্তকে ধরেছে। তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে শিলিগুড়িতে আনা হচ্ছে। সিআইউি সূত্রের খবর, ধৃতের নাম সৌমেন মুখোপাধ্যায় ওরফে আরিয়ন দেব। তাঁর বাড়ি আসানসোলে। গত ২১ জানুয়ারি শিলিগুড়ি শহরের শাসক দলের নেতা প্রবীরকুমার দত্ত ওরফে বাচ্চুবাবুর কাছ থেকে বাস নিয়ে টেন্ডারের কথা বলে অভিযুক্ত ২ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। প্রধাননগর থানার থেকে মামলা পরবর্তীতে ২৮ ফেব্রুয়ারি সিআইডির হাতে যায়।
এ ছাড়াও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শ্রীরামপুরের বাসিন্দা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করানোর কথা বলে ১৬ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে। বেঙ্গালুরুর সূর্যনগর থানায় ৩ জানুয়ারি দেবাশিসবাবু অভিযোগ দায়ের করেছেন। সিআইডির এক কর্তা জানান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চাকরির টোপ দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ছাড়াও ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
সিআইডি সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি মাসে চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ও ভাইকে নিয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন বাচ্চুবাবু। পরিবারটির দূরপাল্লার বাসের ব্যবসা রয়েছে। সেখানে টেলিফোনে অভিযুক্ত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই চ্যানেলের কাজের জন্য দুই বছরের জন্য বাসটি নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। বাচ্চুবাবু জানান, ‘‘প্রথমে রাজি হইনি। এর পরে নিয়মিত মোবাইলে যোগাযোগ করতে থাকে। বেঙ্গালুরুতে একটি হোটেলে দেখাও করেন। পরে আমাদের গোটা পরিবারকে কোম্পানির হোটেল রুম করে রাখার ব্যবস্থা করেন। শেষে টেন্ডারের সিকিউরিটি ম্যানির কথা বলে টাকাটি চায়। শিলিগুড়ি থেকে দুটি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়েছিলাম। আরও ২ লক্ষ টাকা বেশি চেয়েছিল, সেটি অবশ্য জমা দিইনি। শিলিগুড়ি ফিরে নথিপত্র দেখে সন্দেহ হয়। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ দায়ের করি।’’
একই ভাবে শ্রীরামপুরের বাসিন্দা দেবাশিসবাবু চার বছরের মেয়ের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যানটেশনের জন্য বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। ডোনারের শরীর খারাপ হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে ১৬ লক্ষ টাকা অভিযুক্ত হাতিয়ে নিয়ে পালায় বলে অভিযোগ। সেখানেই নিজেকে একটি চ্যানেলের প্রতিনিধি হিসাবে অভিযুক্ত পরিচয় দিয়েছিল। তদন্তে নেমে চম্পাসারি, মিলনমোড় এলাকার এক যুবকের হদিশ মেলে। তার অ্যাকাউন্ট নম্বরেও কিছু টাকা জমা করার জন্য বলা হয়েছিল। সেই সূত্রেই সৌমনের হদিশ অন্ধ্রপ্রদেশে মেলে। অফিসারেরা জানিয়েছেন, কলকাতা, শিলিগুড়ি, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও দিল্লিতে চক্রের সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে।