বিনয় তামাঙ্গ। ফাইল চিত্র।
টানা বন্ধের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি দার্জিলিং। বহু কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে শুধু চা বাগানেই। পর্যটন, ফুল, আদা-কমলা-এলাচ চাষেও বিপুল অঙ্কের লোকসান হয়েছে। বিমল গুরুঙ্গের অনুগামীরা ফের টানা আন্দোলনে নামতে পারেন। ফলে, দার্জিলিঙের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়ের একটা চোরাস্রোত পাহাড়-সমতল সর্বত্রই হালকা হলেও রয়েছে। এখনও আগামী মার্চ-এপ্রিলের মরসুমের তেমন বুকিং হয়নি হোটেল-হোম স্টে-তে। ৫ মাস বৃষ্টিও হয়নি। দ্রুত বৃষ্টি না হলে চায়ের ফার্স্ট ফ্লাশে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে বন্ধে যে ক্ষতি হয়েছে, তার বহর বাড়তে পারে শঙ্কিত চা বাগান মালিকরা। তাই মার্চের প্রস্তাবিত শিল্প সম্মেলন’-এর আগে উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জনের জন্য আসরে নেমেছেন বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপারাও।
জিটিএয়ের কেয়ারটেকার বোর্ড সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই চা-পর্যটন-কৃষি ভিত্তিক শিল্পোদ্যোগীদের কাছে ফোন করে শিল্প সম্মেলন সফলের জন্য সহযোগিতা চাইছেন বিনয়-অনীত জুটি। বিনয় বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজ্য ও দেশের শিল্পপতিদের অনুরোধ করবেন বলেছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই আসবেন। আমরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’’
জিটিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিনয় একাধিকবার দার্জিলিঙের ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, কয়েকজন চা বাগান মালিক ও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (সিআইআই) উত্তরবঙ্গ শাখার কর্তাদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তা শুরু করেছেন। সিআইআইয়ের উত্তরবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান রাজীব লোচন বলেন, ‘‘১০৫ দিনের বন্ধে যে ক্ষতি হয়েছে, তার ধাক্কা সামলাতে অনেক সময় লাগবে। পাহাড়ে অশান্তি হবে না এটা নিশ্চিত হলে অবশ্যই বিনিয়োগ আসবে। আমরাও লগ্নিকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করব।’’
তবে পাহাড়ে শান্তি বজায় থাকার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেলে যে নানা ক্ষেত্রে লগ্নি আসবেই, তা নিয়ে সংশয় নেই সিআইআই-এর স্থানীয় সদস্যদের অনেকেরই। যেমন, মংপুতে সিঙ্কোনা বাগানের জন্য প্রায় ২৭ হাজার একর জমি রয়েছে। তার অনেকটাই এখন পতিত হিসেবে পড়ে আছে। সেখানে পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে নতুন দার্জিলিং গড়ার কাজে গতি আনা যেতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। সিআইআইয়ের সদস্য তথা পর্যটন প্রসারের ভারপ্রাপ্ত কর্তা রাজ বসু বলেন, ‘‘দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং শহরের উপরে আর চাপ বাড়ানো যাবে না। নতুন পর্যটন পরিকাঠামো অন্যত্র গড়তে হবে। ফাঁকা জায়গা চিহ্নিত করে দিলে বিনিয়োগের অভাব হবে না।’’
ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গলের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস জানান, চা ছাড়াও মিরিক, দার্জিলিঙের কমলালেবু, কালিম্পঙের আদা-এলাচের কদর সারা দেশেই। সাবেকি পদ্ধতিতেই চাষবাস, উৎপাদন হচ্ছে পাহাড়ে।
ওই সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হলে নতুন প্রযুক্তি আসবে। তাতে বড় মাপের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে বলেও তিনি দাবি করেন। দার্জিলিঙের একটি নামী রেস্তোরাঁ মালিক তথা হিল ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য অজয় এডওয়ার্ড বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি, কলকাতা সহ গোটা দেশে পাহাড়ের ছেলেমেয়েরা তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যুক্ত রয়েছে। অথচ পাহাড়ে ওই বিষয়ক প্রশিক্ষণের সুসংহত পরিকঠামো নেই। শান্তি-সুস্থিতি থাকলে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্র, হোটেল শিল্পে আরও বিনিয়োগের ইচ্ছে অনেকেরই আছে।’’
তাই পাহাড়ে শান্তি থাকবে, এটা লগ্নিকারীদের বোঝানোর জন্যই দার্জিলিঙের কনকনে শীতেও ঘাম ঝরাতে হচ্ছে বিনয়-অনীতদের।