Elephant Attack

খাবার বাড়ন্ত জঙ্গলে, ধানের লোভেই হানা?

কোচবিহারের সীমানা ছুঁয়ে রয়েছে একাধিক জঙ্গল। চিলাপাতা, জলদাপাড়ার জঙ্গল রয়েছে। এ ছাড়াও ডুয়ার্সের যে সব জঙ্গলে হাতি রয়েছে তা লোকালয়ে বেরোনো এখন নিত্য দিনের ঘটনা।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৩
Share:

জলপান, রবিবার বিকেলে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বক্সা ব্যাঘ্রপ্রকল্পের জঙ্গলে নিশচিন্তে মা হাতি ও শাবক। – নারায়ন দে।

কখনও একটি হাতি, কখনও আবার দলবদ্ধ ভাবে হাতির পাল বাইরে বেরোনোর ঘটনা এখন নিয়মিত ঘটছে। শুধু বনাঞ্চল নয়, কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছেও পৌঁছে গিয়েছিল ছয়টি হাতির একটি দল। তার মধ্যে থেকে একটি দলছুট হয়ে পড়ে। পরে ওই হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে বক্সার জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ছাড়া হয়। পাঁচটি হাতিকেও এমনিতেই জঙ্গলে নিয়ে যেতে সমর্থ হন বন কর্মীরা। হাতির হামলায় ৪ জন বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে, কেন এই সময়ে জঙ্গল ছেড়ে বাইরে বেরোচ্ছে হাতির পাল? শুধুই পাকা ধানের লোভে, না পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? শুরু হয়েছে আলোচনা। কোচবিহারের এডিএফও জীবন কুমার নাথও বলেন, ‘‘কেন এই সময় হাতি জঙ্গল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।"

কোচবিহারের সীমানা ছুঁয়ে রয়েছে একাধিক জঙ্গল। চিলাপাতা, জলদাপাড়ার জঙ্গল রয়েছে। এ ছাড়াও ডুয়ার্সের যে সব জঙ্গলে হাতি রয়েছে তা লোকালয়ে বেরোনো এখন নিত্য দিনের ঘটনা। প্রতিদিনও কোনও না কোনও এলাকায় হাতির হামলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ধান খেতের ক্ষতি তো হচ্ছে সর্বত্র। ওই জঙ্গলগুলি থেকে দিনহাটার দূরত্ব অনেকটা। কমপক্ষে পঞ্চাশ-ষাট কিলোমিটারের রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাতির দল বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে পড়ছে।

Advertisement

কী কারণে হাতি জঙ্গল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। এই সময়ে ধান পাকতে শুরু করেছে। যা হাতির পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে। জঙ্গলে খাবারের পরিমাণও নিয়মিত কমছে। এ ছাড়া জঙ্গল আয়তনে ছোট হওয়ার মতো কারণ তো রয়েইছে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ‘ন্যাফে’র মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘জঙ্গল দিনে দিনে ছোট হচ্ছে। তৃণভোজী প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে জঙ্গলে। সেই তুলনায় খাবারের পরিমাণ কমছে। খাবারের খোঁজে বাইরে বেরিয়ে পড়ছে বন্যপ্রাণীরা। এ ছাড়া এখন ধান পাকতে শুরু করেছে। সেই ধান খেতে বেরিয়ে পড়ছে হাতির দল। হাতি বা যে কোনও বন্যপ্রাণী যাতে জঙ্গল ছেড়ে বাইরে না বেরোয় সে জন্য সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন।’’
আর একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ‘ন্যাসের’ তরফে অরূপ গুহ জানিয়েছেন, এস কময় কোচবিহারের বড় এলাকা জঙ্গল ছিল। যে জায়গায় হাতি পৌঁছেছে এ বার, সেই সব রুটে হাতি এক সময় চলাচল করত। তিনি বলেন, ‘‘বলা হয়, হাতি লোকালয়ে বেরিয়েছে।
আসলে বিষয়টি তেমন নয়। হাতির জঙ্গল দখল করেছে মানুষ। জঙ্গল কেটে কেটে ছোট করা হয়েছে। তাতেই সমস্যা বেড়েছে। হাতি এ সব এলাকায় অস্বাভাবিক নয়।’’

কোচবিহারে পুলিশ দ্যুতিমান ভট্টাচার্য রবিবার দিনহাটায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়েও তেমনই ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘‘একটি দেশে ৩৩ শতাংশ বনাঞ্চল থাকা উচিৎ। অথচ আমাদের দেশে আছে মাত্র ২৪ শতাংশ। ক’দিন আগে দিনহাটাতে হাতির ‘হানা’ হয়েছে। হাতি হানা দিয়েছে, আমি বলব না। আমরা হাতির জায়গায় প্রবেশ করেছি। হাতি এই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে চলেছে। সেই সব জায়গায় আমরা চার লাইনের রাস্তা বানিয়েছি। সেই সব রাস্তায় আমরা রেললাইন বানাচ্ছি। সেই সব রাস্তায় আমরা রিসর্ট বানাচ্ছি। হাতির ঘরে আমরা হানা দিচ্ছি। হাতি কে আমরা উত্ত্যক্ত করছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একটা হাতি কখনও খুন করতে চায় না। হাতিকে উত্যক্ত করতে থাকলে হাতি বিরক্ত হয়, ঘাবড়ে যায়। তখন বিপদ হয়। পুলিশ বলার চেষ্টা করেছে, হাতির থেকে দূরে থাকুন, সতর্ক থাকুন। তার পরেও সবাই যদি হই হই করে ছুটতে থাকে তাহলে হাতি কী করবে।’’

শনিবার রাতেও বানারহাটের ডায়না জঙ্গল থেকে একটি দলছুট হাতি চারটি চা বাগানে ঘুরে রবিবার সকালে জঙ্গলে ফিরে যায়। হাতির হানায় একটি ঘর ও দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এক ব্যক্তি আহত হন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement