অসচেতন: এমনই ছবি সর্বত্র। শিলিগুড়িতেও। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনের সময় থেকে যে সাবধানতা দেখা গিয়েছিল মানুষের মধ্যে, বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসতেই উত্তরবঙ্গে তা উধাও হয়ে গিয়েছে অনেকটাই। শিলিগুড়ে, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহের মতো উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে হাটেবাজারে মাস্ক ছাড়া ঘোরার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনই রাজনৈতিক দলের মিছিল, সভা-সমিতিতে করোনা বিধি উপেক্ষা করে ভিড় উপচে পড়ছে। অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই, দূরত্ব বিধির বালাই নেই। অথচ কেরল, মাহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি চিন্তা বাড়িয়েছে। সংক্রমণ বাড়ছে মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, ছত্তীসগঢ়ের মতো একাধিক রাজ্যে। নতুন স্ট্রেন থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় তাই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকের দফতর থেকেও।
উত্তরবঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘মানুষকে আগাম সতর্ক হতে বলছি, যাতে পরিস্থিতির অবনতি না হয়। বিভিন্ন রাজ্যে নতুন করে সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে খবর আসছে। এখনই সাবধান হওয়া জরুরি।’'
এখন পর্যন্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, প্রশাসনের কর্মী-আধিকারিকের মতো খুব সামান্য অংশের মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। অথচ ভোটের মুখে কোচবিহার থেকে শুরু বিজেপির পরিবর্তনযাত্রা, মুখ্যমন্ত্রী থেকে তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ভিড়, শিলিগুড়িতে কংগ্রেসের মহামিছিলে যে ভাবে কয়েক হাজার মানুষ শামিল হয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। বিভিন্ন দলের মিছিল, বাইক র্যািলি প্রায়ই হচ্ছে। কোনও ক্ষেত্রে দূরত্ব বিধি মানা হচ্ছে না। মাস্ক পরার প্রবণতা তলানিতে। একই পরিস্থিতি বিয়ে, উৎসব, অনুষ্ঠানেও। এই সময় বিয়ের মরসুম। ওই সমস্ত অনুষ্ঠানে ভিড় জমছে আগের মতোই।
চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের কয়েক জন জানান, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের চিন্তা নতুন স্ট্রেন নিয়ে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে নতুন ‘দেশজ স্ট্রেন’ মিলেছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এই স্ট্রেন ছড়ালে বিপদ বাড়বে, আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। কেন না এই সমস্ত নতুন স্ট্রেন দ্রুত ছড়াতে পারে। এখন তাই পরীক্ষা বাড়াতে বলা হচ্ছে। ভোটের সময় বাইরে থেকে নেতা-মন্ত্রী তো বটেই, বিভিন্ন দলের লোকজন রাজ্যের অন্যান্য প্রান্ত থেকেও উত্তরবঙ্গে আসছেন। ভোট যত এগিয়ে আসবে, এই ভিড় বাড়বে। এনজেপি স্টেশনে ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসেও ভিড় হচ্ছে। বাগডোগরা বিমানবন্দরে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা থাকলেও ভিড় হচ্ছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভাইরোলজি রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অরুণাভ সরকার বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে কী অবস্থা ছিল, মানুষ যেন ভুলে না যান। মাস্ক পরুন, দূরত্ব বিধি মেনে চলুন। না হলে বিপদ।’’ তাই সংক্রমণ তলানিতে বলে আত্মতুষ্ট না হয়ে সাবধান থাকতেই বলা হচ্ছে।