নামকরণ হয়েছে। তবে সেভাবে কাজ শুরু হয়নি। তাই কবে সম্পূর্ণ হবে সেতু তাও স্পষ্ট নয়। কোচবিহারের হলদিবাড়ি ও মেখলিগঞ্জের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের প্রস্তাবিত ওই ‘ জয়ী’ সেতুই হয়ে উঠেছে শাসক ও বিরোধী শিবিরের প্রচারের অন্যতম অস্ত্র। বিধানসভা ভোটের মুখে ‘জয়ী’ সেতুর কৃতিত্ব দাবি করছেন সবপক্ষই। চলছে বাসিন্দাদের মন জয়ের চেষ্টা।
বাসিন্দারা জানান, কোচবিহারের প্রত্যন্ত এলাকা হলদিবাড়ি থেকে মহকুমা সদর মেখলিগঞ্জ তিস্তা নদী বিচ্ছিন্ন। তিস্তার উপর সেতু তৈরি করে ওই দুই এলাকার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালুর দাবিও এলাকায় দীর্ঘদিনের। কিন্তু এতদিনেও সেই দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। গত অগস্টে প্রস্তাবিত ওই সেতুর কাজের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস হয় মাত্র। তারপর কয়েকমাস পেরোলেও সেভাবে কাজ শুরু হয়নি। তবে সেতুর নামকরণ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, লড়াইয়ের প্রত্যাশাপূরণের নিরিখে নাম দেওয়া হয়েছে ‘জয়ী’। কৃতিত্বের দাবি নিয়েই জমেছে মেখলিগঞ্জের ভোট তরজা।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভায় এর কৃতিত্ব দাবির পাশাপাশি সোস্যাল মিডিয়ায় ‘জয়ী’র উল্লেখ করে প্রচার হচ্ছে। মেখলিগঞ্জ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্ঘ্য রায়প্রধানের অনুগামীরা ওই প্রচার চালাচ্ছেন। তৃণমূল শিবিরের দাবি, রাজ্যের মানুষ কংগ্রেস, বাম জমানা দেখেছেন। কিন্তুর সে সময় সেতুর শিলান্যাস হয়নি। গত অগস্টে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই হলদিবাড়ির বাসিন্দাদের ওই স্বপ্নের সেতুর কাজ শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ওই সেতুর নামকরণ করেছেন। ফলে উত্তরবঙ্গের অন্যতম দীর্ঘ সেতু নির্মাণ এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আন্তরিক উদ্যোগ না থাকলে এমনটা সম্ভব ছিলনা।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ওই সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। সেতুটি তৈরি সম্পূর্ণ হলে হলদিবাড়ি-মেখলিগঞ্জ যাতায়াতে দুর্ভোগ, সময় ও বাড়তি খরচের সমস্যা মিটবে। আগে কোন সরকার এনিয়ে ভাবেনি।”
বামেরা অবশ্য প্রচারে ওই সেতুর কৃতিত্ব তাঁদের আন্দোলন চেষ্টার সাফল্য বলেই তুলে ধরছেন। বাম শিবিরের ব্যাখা, ২০১০ সালে বাম সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে তিস্তার ওপর সেতু তৈরির ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সে সময় তারাই আর্থিক অনুমোদনের জন্য দরবার করেন। সে সময়ই ওই সেতুর প্রকল্পটি যোজনা কমিশন অনুমোদন করে। মেখলিগঞ্জের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী পরেশ অধিকারী জানান, তিস্তার সেতু না থাকায় জলপাইগুড়ি হয়ে হলদিবাড়ি ও মেখলিগঞ্জের বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। ঘুরপথে ওই যাতায়াতে দূরত্ব পড়ছে ৭৬ কিমি। অথচ ওই সেতু তৈরি হলে সেটা কমে ১১ কিমি হবে। তিনি বলেন, ‘‘তাই আমরা এ নিয়ে লেগেছিলাম। বাম আমলেই প্রকল্পটি গ্রহণ করে যোজনা কমিশন। না হলে সেতুর স্বপ্নপূরণের কাজ এগোত না। প্রচারে এসব বলতে হচ্ছে।”
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “বাম বা তৃণমূল নয়, সেতুর জন্য যদি কিছু কেউ করে থাকে তা করেছে বিজেপি। কেন্দ্রের মোদি সরকার আর্থিক বরাদ্দ দিয়েছেন। মানুষ সেটা” কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “নব্বইয়ের দশকে তিনবিঘা চুক্তির সময়েই কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার ওই সেতু তৈরির উদ্যোগ নেয়। তাই কৃতিত্ব কারও একার নয়।”
‘জয়ী’ অস্ত্রে বাসিন্দাদের মন জয় করে শেষপর্যন্ত শেষ হাসি কে হাসেন এখন সেটাই দেখার।