প্রতীকী ছবি
শহর থেকে গ্রাম সবই যেন ভাগাভাগি করে বসে আছে। কেউ উদয়ন গুহের লোক, কেউ নিশীথ প্রামাণিকের লোক, তো কেউ নুর আলম হোসেনের লোক। দিনহাটা থেকে গীতালদহ যাওয়ার রাস্তায় ওকরাবাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবককে প্রশ্ন ছুঁড়তেই বেরিয়ে এল তেমনটাই।
আপনি কি তৃণমূল করেন? উত্তর এল ‘নিশীথ’দার তৃণমূল করি। আবার খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একজন একই ভাবে জবাব দিলেন, “আমি আলমদার তৃণমূল করি।” এমনই উত্তর এল দিনহাটার বহু জায়গা থেকে। কেউ কেউ জানিয়ে দিলেন তাঁদের নেতা উদয়ন গুহ। বিরোধীরা কটাক্ষ করে অভিযোগ করেন, তৃণমূলে আর কেউ ‘নেতা’ নেই। সকলেই ‘সর্দার’। তাঁদের অভিযোগ, এই সর্দার’দের ‘দিনহাটা দখলে’র লড়াইয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে মানুষের।
তৃণমূল নেতারা অবশ্য বিরোধীদের এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, গ্রামের দিকে কিছু লোকজন ব্যক্তিস্বার্থে গন্ডগোল করছে। এর মধ্যে রাজনীতি নেই। উদয়নবাবুর কথায়, “বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা নিয়ে এমন কথা বলছে। দ্বন্দ্বের সামান্য কিছু বিষয় আছে। তবে যেভাবে সমস্ত ঘটনাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।” দিনহাটা- ১নম্বর ব্লকের তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্ব রয়েছেন নুর আলম হোসেন। জেলা পরিষদের সদস্য নুর আলম উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেন, “দলের দেওয়া দায়িত্ব মেনেই কাজ করছি। দুষ্কৃতীরা দলের কর্মীদের উপরে নানা জায়গায় হামলা করার চেষ্টা করছে। আমরা প্রতিবাদ করছি।” তাঁর নিশানা যুব তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা নিশীথ প্রামাণিকের দিকে। নিশীথবাবু অবশ্য জানান, তিনি বাইরে আছেন। তাঁর কথায়, “দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। যাঁরা দলের ক্ষতি করে নিজের প্রচার করছেন, খুব শীঘ্রই দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।”
বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ দিনহাটার গীতালদহের একটি স্কুলে শিক্ষককে লক্ষ করে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় দু’জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্কের ছাপও রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অঞ্চলে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা নিশীথবাবুর অনুগামীদের দাপট রয়েছে। শুধু ওই অঞ্চল নয়, দিনহাটা- ১ নম্বর ব্লকের ৮টির বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে নিশীথবাবুর অনুগামীদের দাপট রয়েছে। সম্প্রতি নিশীথবাবুকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের পর ওই অনুগামীরা কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
সেখানেই দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠছে। নিশীথ অনুগামী অঞ্চল স্তরের এক নেতার কথায়, “মূল তৃণমূল এলাকার দখল নিতে চাইছে। তাই গন্ডগোল।” যদিও মূল তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “ওই এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে। মানুষ তা থেকে বেরোতে চাইলেই গণ্ডগোল হচ্ছে।”