রবিবার ভোর থেকে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে গঙ্গা নদীর জল ঢুকছে মালদহের মানিকচক ব্লকের ভুতনির তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। ছবি: জয়ন্ত সেন।
গত বর্ষায় গঙ্গার জলের তোড়ে কেশরপুর কলোনিতে বাঁধ ভেঙেছিল। বছর ঘুরলেও বাঁধের ভাঙা অংশের মেরামত হয়নি বলে অভিযোগ। গঙ্গার জলস্তর বিপদসীমার উপরে উঠে যাওয়ায় রবিবার ভোর থেকে বাঁধের সেই ভাঙা অংশ দিয়ে হু-হু করে জল ঢুকে এ দিন প্লাবিত হল মালদহের মানিকচক ব্লকের ভুতনির তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের একাংশ।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গার জলস্তর বাড়ছে। ফলে ভুতনির ৩টি পঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়বে। এ দিকে গঙ্গার জলস্তর বেড়ে চলায় এ দিন জল ঢুকেছে মানিকচকের গোপালপুর পঞ্চায়েতের অসংরক্ষিত এলাকায়। ভাঙন চলছে কালিয়াচক ৩ ব্লকের গোলাপ মণ্ডলপাড়া জুড়েও।
এ দিন দুপুরে মানিকচকে যান জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক। বিডিও অফিসে আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়েবৈঠক করেন জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। ত্রাণ শিবির খুলে দুর্গতদের শুকনো ও রান্না করা খাবার বিলির পরিকল্পনা হয়েছে। জলবন্দি বাসিন্দাদের উদ্ধারে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, ত্রাণ বিলি নিয়ে প্রশাসনিক ঢিলেমি রয়েছে।
গঙ্গা, ফুলহার এবং কোশি নদী দিয়ে ঘেরা মানিকচক ব্লকের ভুতনির উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর ও হীরানন্দপুর পঞ্চায়েত। ভুতনিকে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে কয়েক দশক আগে রিং বাঁধ তৈরি হয়েছিল। বছর চারেক আগে হীরানন্দপুর পঞ্চায়েতের কেশরপুর ও কালুটোনটোলায় বাঁধের একাংশ গঙ্গায় তলিয়ে যায়। ওই বাঁধের পিছন দিকে হীরানন্দপুর পঞ্চায়েতের তরফে একটি ছোট বাঁধ তৈরি হয়। গঙ্গার রিং বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর ওই বাঁধকে মজবুত করে সেচ দফতর। গত বছর বর্ষায় কেশরপুর কলোনি ও কালুটোনটোলার মাঝে বাঁধের ১৫০ মিটার অংশ ভেসে যায়। গত এক বছরে ওই বাঁধ মেরামত হয়নি। সেচ দফতর সূত্রে খবর, জমি নিয়ে জট থাকায় সেখানে নতুন বাঁধ তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি।
এ দিন ভোর থেকে জল ঢুকতে শুরু করে ভূতনির তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায়। কেশরপুর কলোনির অর্জুন প্রামাণিক বলেন, ‘‘বাঁধ থাকায় কয়েক বছর বন্যা থেকে রক্ষা পাচ্ছিলাম। এদিন সকাল থেকে বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জল ঢুকে প্লাবিত হয় এলাকা।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য দেবজ্যোতি সিংহ অভিযোগ করেন, ‘‘ দীর্ঘদিন ধরে বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সে কাজ না হওয়ায় প্লাবিত হল ভুতনি। অনেকের কাছেএ দিন ত্রাণ পৌঁছয়নি।’’
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘ভুতনিতে বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়েছে। ত্রাণ শিবির খুলে সেখানে রান্না খাবার বিলির ব্যবস্থা হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে ত্রিপল পৌঁছনোর কাজ চলছে। নৌকায় দুর্গতদের শিবিরে আনা হচ্ছে।’’