তিনতলা মেসবাড়ির ১৬টি ঘরে থাকেন ১৮ জন ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ঘেঁষে রয়েছে মেসবাড়িটি। তাই অনেকেই সেখানেই তাকতে চান। তখন মেসবাড়ি পুরোপুরি নিরাপদ বলে ছাত্রীদের পরিবারদের আশ্বস্তও করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এবং মেসবাড়ির মধ্যে কোনও সীমানা পাঁচিল নেই। যেই জমিতে মেসবাড়িটি রয়েছে সেটির মালিকানা নিয়ে মামলা রয়েছে বলে পাঁচিল নেই। যে কেউই প্রথম দেখে বাড়িটিকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই বলে মনে করতে পারেন। সেই বাড়ির তিনতলা থেকে শুক্রবার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে।
এ দিন প্রাথমিক তদন্তের পরে মেসবাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন পুলিশ কর্তাদের একাংশই। দিনে রাতে কোনও সময়েই বাড়িতে নিরাপত্তা কর্মী থাকে না। বহিরাগতদের ঢোকা আটকানোর কোনও উপায় নেই। এমনকী আবাসিকদের আত্মীয় কেউ থাকতে এলে তাঁর পরিচয়ও যাচাই করা হয় না বলে অভিযোগ। যে কোনও হস্টেল বা মেসে এক জন সর্বক্ষণের সুপারভাইজার থাকার কথা, মেসবাড়িতে তেমন কোনও ব্যবস্থাও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া এলাকা সহ শিবমন্দির জুড়েই কোথায় মেস-হস্টেল হয়েছে অথবা বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে তার তালিকা তৈরি হচ্ছে। ওই মেসবাড়ির নিরাপত্তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ছাত্রীটির মৃত্যুকে খুন বলে অভিযোগ করেছেন পড়ুয়াদের একাংশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের তরফে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করা হয়। ছাত্রীর পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়ে এক যুবক ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকায় সে আতঙ্কিত ছিল। খুন বা মানসিক অবসাদ যাই হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ দাবি করেছেন, মেসবাড়িতে নজরদারি বাড়াতে হবে। মেসবাড়িতে ঢুকেও ওই যুবক হুমকি দিয়েছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়েও বিশদে তদন্ত চান পড়ুয়ারা।
বিধি অনুযায়ী, পড়ুয়াদের আবাসনে বিশেষত যেখানে ছাত্রীরা থাকেন, সেখানে কাউন্সিলর থাকার কথা। মানসিক অবসাদ হলে কাউন্সিলররা ছাত্রীদের মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। মেসবাড়িটি লিজে নিয়ে পরিচালনা করেন লাগোয়া এলাকার এক বাসিন্দা। পুলিশ তাঁকে জেরা করবে বলে জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘যা বলার পুলিশকে জানিয়েছি। সংবাদমাধ্যমে কিছু বলার নেই।’’
বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া এলাকায় গজিয়ে উঠেছে একের পর এক ছাত্রীবাস গড়িয়ে উঠেছে। সেই সব ছাত্রীবাস কতটা নিরাপদ? কোন আবাসনের কোন ঘরে কোন ছাত্রী অবসাদে ভুগছেন? এ সবের খোঁজ করার কেউ নেই বলে আক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেরই।