দক্ষিণ দিনাজপুরে ডিজিট্যাল রেশন কার্ড বিলি।—নিজস্ব চিত্র।
পয়লা এপ্রিল ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসাবে রাজ্যে প্রথম দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু নিয়ে যতটা হইচই হয়েছিল, সরকারি ঘোষণা মতো এ দিন প্রকল্পটির সূচনা হল ঠিক ততটাই নীরবে।
প্রচার ছিল না। হয়নি কোনও সরকারি অনুষ্ঠানও। কতকটা দিশাহীনভাবেই জনপ্রতিনিধি ও খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা গ্রাহকদের একাংশের হাতে কার্ড তুলে দিলেন। কিন্তু স্পষ্ট করে তাদের জানাতে পারলেন না ঠিক কবে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে পুরো প্রকল্পটি চালু হবে। ফলে জেলার অধিকাংশ মানুষ জানলেনই না খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হয়ে গেল।
আদতে কয়েকটি ব্লকে কিছু বাসিন্দাদের ডেকে এনে তাঁদের হাতে ডিজিটাল কার্ড তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করা হল। তবে কার্ড হাতে পেয়ে উপভোক্তারা কি সুবিধা পাবেন, সেই তথ্য তাদের কাছে অজানাই থেকে গেল বলে অভিযোগ। এদিন বালুরঘাট শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের উপভোক্তা উদয় ঘোষ কিংবা ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিমল টুডু বলেন, ‘‘শুনেছিলাম সস্তায় চাল ও গম পাব। কিন্তু কার্ড পেলাম। নামের বানানে ভুল রয়েছে।’’ আবার এদিন ডাক পেয়ে এসেও নতুন ডিজিটাল কার্ড পেলেন না শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের উপভোক্তা সীতারাম মুখিয়া। তিনি বলেন, ‘‘পুরোনো রেশন কার্ড আনতে পারিনি বলে ওই কার্ড পেলাম না।’’ খাদ্য দফতর জানিয়েছে, গ্রাহকদের পুরনো রেশনকার্ডে সিলমোহর দিয়ে নতুন ডিজিটাল কার্ড সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে।
বালুরঘাট পুরসভার সভাগৃহে এদিন বিকেলে চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা, ভাইস চেয়ারম্যান রাজেন শীল সহ কাউন্সিলারদের উপস্থিতিতে শহরের ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৭টি ওয়ার্ডের সাত জন উপভোক্তার মধ্যে ওই কার্ড বিলি করে খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করা হল। উপস্থিত ফুড ইন্সপেক্টার মনোজ দাস বলেন, এদিন টোকেন হিসাবে ডিজিটাল কার্ড বিলি করা হলো। বৃহস্পতিবার থেকে সব ওয়ার্ডে ওই কার্ড বিলি শুরু হবে। তবে চেয়ারপার্সন চয়নিকাদেবী বলেন, ‘‘শহরে কিভাবে উপভোক্তাদের মধ্যে ওই কার্ড বিলি হবে, তা খাদ্য দফতরের আধিকারিক, মহকুমাশাসক এবং কাউন্সিলররা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ কবে ওই বৈঠক হবে, তা ঠিক হয়নি বলে চেয়ারপার্সন জানান।
অসম্পূর্ণ প্রস্তুতির জেরে বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরে কয়েকটি ব্লকে নমুনা হিসাবে ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলির মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রকল্পের সূচনা হলো। এ জেলায় একমাত্র কুশমন্ডি ব্লকে গত কয়েকদিন ধরে গ্রাহকদের ডিজিটাল কার্ড বিলি শুরু হয়। কুশমন্ডির বিডিও ওয়াদি জেলপো ভুটিয়া বলেন, এদিন পর্যন্ত গ্রাম সংসদ স্তরে প্রায় ৬১ হাজার কার্ড বিলি করা হয়েছে। কুশমন্ডিতে কার্ড বিলি বাকি এখনও প্রায় ৫৯ হাজার। এদিন দক্ষিণ দিনাজপুরের ৮টি ব্লকের মধ্যে ৬টি ব্লকে এলাকা ভিত্তিক টোকেন কার্ড বিলির মাধ্যমে কার্যত ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু হলো বলে প্রশাসনের দাবি। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘কার্ড বিলির মাধ্যমে জেলায় খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু হল। জেলাজুড়ে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত উপভোক্তার কাছে ওই কার্ড পৌঁছে দিতে আরও দু’সপ্তাহ লাগবে। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে উপভোক্তাদের রেশন দোকান থেকে খাদ্যশস্য সরবরাহের উদ্যোগ চলছে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।
জেলা খাদ্য দফতরের নিয়ামক অমরেন্দ্র রায়ের বক্তব্য, এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ডিজিটাল রেশন কার্ড বিলি বন্টন থেকে সংশোধন, সংযোজন প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। জেলায় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতাভুক্ত মোট ১০ লক্ষ ৬৫ হাজার উপভোক্তার মধ্যে ডিজিটাল কার্ড বিলির পর রেশন দোকান থেকে খাদ্যশস্য বিলির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ডিজিটাল কার্ড না পৌঁছনোয় এদিন বালুরঘাট ব্লকে প্রকল্পটি শুরু করা যায়নি। গঙ্গারামপুরে পুরভোটের জন্য কার্ড বিলি স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে বাকি হিলি থেকে হরিরামপুর এবং কুমারগঞ্জ, বংশীহারি ও তপন ব্লকে কয়েকটি অঞ্চলে বাসিন্দাদের মধ্যে নমুনা কার্ড বিলি করে নিয়মরক্ষা করা হয়েছে। তপন ব্লকে ১১টি অঞ্চলের মধ্যে এদিন রামচন্দ্রপুর, গুড়ইল, আউটিনা এবং মালঞ্চার কিছু বাসিন্দার মধ্যে ডিজিটাল কার্ড বিলি হয়েছে। তপনের বিডিও পঙ্কজ তামাং বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বাকি অঞ্চলে কার্ড বিলি শুরু হবে।